Khondokar Zobair
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!অয়ময়, রুপনগর, সংসপ্তক অথবা আলিফ লায়লা , সিন্দাবাদ, ম্যাগগাইভার, রবিনহুড এর মত সিরিয়াল দেখতে আমার বড় মামার কাঁধে চেপে পাশের গ্রামে যেতাম একসময়। সে সময় ব্যাটারি দিয়ে চলত ১৪ অথবা ১৭ ইঞ্চি সাদাকালো টেলিভিশন। যা এখন কারো ঘরে তো দুরের কথা, জাদুঘরেও আছে বলে মনে হয় না। প্রায় প্রতিটি ছবিতেই প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের হটাৎ হার্ট অ্যাটাক এ মৃত্যূ আমাকে কাঁদিয়েছে সত্যি। যদিও আমি জানতাম সবই অভিনয়। তবুও মনকে বোঝাতে পারতাম না। নিজের অজান্তেই দু-চোখ বেয়ে লোনা জলের শ্রাবন নেমে আসত। আজ শেফালীদের ঘরে ২৪ অথবা ৩২ ইঞ্চি রঙ্গিন টেলিভিশন, সাথে ডিস লাইনের সংযোগ তো অবশ্যই আছে। শেফালীদের ঘরের ছোট বাচ্চাটা এখন কোন নাটক বা সিনেমা দেখে আমার মত কাঁন্না করে কিনা তা জানতে খুব ইচ্ছা হয়। সে কথা ভাবলে এক মুহুর্তে নানান স্বপ্ন খেলে যায় মাথায়।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিহাস একটি ঐতিহ্যের ইতিহাস। তৈরি পোশাক শিল্পের আজকের অবস্থানে আসতে অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে। কিছু সাহসী উদ্দোক্তা, অনেক অপ্রতুলতার মধ্যেও সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা এবং আমার প্রিয় শ্রমিক ভাই-বোনদের দক্ষতা এই শিল্পকে আজ বিশ্ব বাজারে একটি স্বনামধন্য অবস্থানে পৌছে দিয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পৃথক ভাবে পরিচিত করেছে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প। সর্বশেষ মজুরী বৃদ্ধি নিয়ে সারাদেশের শ্রমিকগণ যখন প্রতিদিন রাস্তায় দাড়িয়ে তাদের অধিকার আদায়ের স্লোগান দিয়েছে, তখন বারংবার কমপ্লায়েন্স সংশ্লিষ্টদেরকে শুনতে হয়েছে নানান কটু কথা। একদিকে শ্রমিকের চোখে তারা যেমন মালিকের লোক, অন্যদিকে মালিকের চোখে তারা হলো সবচেয়ে অকর্মন্য। টপ ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট আর মিড লেভেলের কথা না হয় অপ্রকাশিতই থাক আজ। গোলাম হোসেনের মত শুধু হাতে তালি দিয়ে কমপ্লায়েন্স এর লোকদের পেট ভড়াবার ব্যার্থ চেষ্টা চলছে আজও। হাজারও সমস্যার মধ্যেও এরাই কণ্যাদায়গ্রস্থ অসহায় ও দরিদ্র পিতার মত অডিটের সময় কারখানাকে অষ্টাদশী যুবতী নববধুর মত সাজিয়ে তোলে। নানান ধরনের কাগজপত্র প্রস্তুত করে অডিট পাশ কারাতে ব্যাস্ত থাকে। ভীষণ ক্ষুধায় এদের পেটের চামড়া পিঠে লেগে গেলে তারপর একদিন না হয় লিখব তাদের কথা! ততদিনে উপরওয়ালাদের বোধদ্বয়ের অপেক্ষায় থেকে আজ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা তুলে ধরতে চাই। সংক্ষিপ্ত এজন্য যে, শ্রমিক-মালিক এর সম্পর্ক, সমস্যা আর সমাধান একটি বিস্তৃত বিষয়, যা নিয়ে হয়ত একটি প্রবন্ধ লেখা সম্ভব।
উৎপাদন বিভাগের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের একটি গুরত্বপূর্ন ভূমিকা থাকে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে। নানান ধরনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ থেকেই হয়ত তারা সরাসরি না হলেও একধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলে উসকে দেয় শ্রমিকদের। তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিটি কারখানাতেই প্রতিদিন সকালে ভিন্ন ভিন্ন সেকশন ও বিভাগের লোকদের সাথে সংক্ষিপ্ত মিটিং করা হয় উৎপাদন নিয়ে। শ্রমিকের সুবিধা-অসুবিধা, স্টাফদের অপ্রাপ্তি এবং অহেতুক ও অযৌক্তিক প্রেসার নিরসনে কোন মিটিং সাধারণত হয় বলে আমার জানা নাই। ফলশ্রুতিতে স্টাফ ও শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হয় অপ্রকাশিত ক্ষোভ। ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য যখন তারা ম্যানেজমেন্টের কাছে আসে তখনও হয়ত নানান অযুহাতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কারণ ম্যানেজমেন্টের ঐ কর্মকর্তা জানেন সেই শ্রমিক বা স্টাফ কি বলবেন তাকে। এভাবে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এই বাড়তে থাকা পুঞ্জিভুত ক্ষোভই কখনও যৌক্তিক আবার কখনো অযৌক্তিক আন্দোলনের আগুনে সামান্য হলেও ঘি ঢেলে দেয়। তখন বন্ধ হয় উৎপাদন এবং কারখানার সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। কারখানার চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পরে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ভালো অপারেটররা চলে যায় পাশের কারখানায় এবং মান সম্মত উৎপাদন হয় ব্যহত। নির্ধারিত সময়ে সিপমেন্ট হয় বাধাগ্রস্ত এবং বৃদ্ধি পায় অনাকাংখিত খরচ। ক্ষোভকে পুঞ্জিভুত হতে না দিয়ে অভিযোগকারীর কথা মনযোগ সহকারে শুনলে এমন পরিস্থিতি অবশ্যই তৈরি হবেনা বলেই আমার বিশ্বাস। যৌক্তিক বা অযৌক্তিক যাই হোক, তার বা তাদের দাবি সম্ভব হলে পূরণ করতে হবে এবং সম্ভব না হলে তাদেরকে সুন্দর করে, দরকার হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাধীক উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে শ্রমিক বা সেই স্টাফ অবশ্যই বুঝতে পারবে যদি বোঝানোটি দক্ষতাপূর্ণ ও যৌক্তিক হয়। আর অন্যকে বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রন করার দক্ষতা ম্যানেজমেন্টের যে কোন কর্মকর্তার একটি অতি গুরত্বপূর্ণ যোগ্যতা হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। যার বা যাদের মধ্যে এই বোঝানোর দক্ষতা নাই তারা হয়ত ম্যানেজমেন্ট এর তালিকাভূক্তই নয় এক অর্থে।
তৈরি পোশাক শিল্পের এমন অনেক মালিক হয়ত আছেন যারা তাদের কারখানা এখনও দেখেন নাই অথবা সেই সময়ও পান নাই। এমন অনেক মালিক আছেন যারা কালেভদ্রে হঠাত একদিন কারখানায় যান। এমন কিছু কারখানার মালিকের কথা আমি শুনেছি যারা বছরে সর্বোচ্চ দুই/চার বার কারখানায় যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মালিকের অনেক ব্যবসা, মালিকের অধিনস্থ অনেক কর্মি তাই প্রতি মাসের শেষে প্লান্ট ম্যানেজার, জিএম অথবা সিও বা সিইও মালিক মহোদয়কে লাভ-লোকশানের হিসাব বুঝিয়ে দেন। তিনিই হয়ত মালিকের নতুন পরিকল্পনা হিসাবে অধস্তনদেরকে বুঝিয়ে দেন পরবর্তি টার্গেট বা লক্ষ্য কি হবে। এতে করে ক্ষেত্র বিশেষে মালিকের অধস্তন বড় কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা বৃদ্ধি পায়। সিনিয়র কর্মকর্তাগণ এক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণের জন্য অধিক চাপে থাকেন। বিষয়টি অনেকটা ৫০ ওভারের ৩০০ বলেই ৬ রান হিসাবে ১৮০০ রান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মত। ১৮০০ রানকেই এক্ষেত্রে মালিক তার ক্যাপাসিটি মনে করেন। আর এই লক্ষ্য পূরণ করতে মরিয়া হয়ে উঠলেই শ্রমিক মালিক সম্পর্কের অবনতি হয় এবং দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধি পায় ক্ষোভ। শুরু হয় অতিরিক্ত শ্রমের জন্য অমানবিক প্রেসার এবং ভালো অপারেটরগণ চলে যান পাশের কারখানায় ফলশ্রুতিতে পণ্যের কাংখিত মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও প্রতিষ্ঠানের সুনামের ক্ষতি হয় বেশ। ভালো কিছু ক্রেতা বিমুখ হয় কারখানার প্রতি।
ট্রেড ইউনিয়নকে ইগনোর করতে বর্তমানে প্রায় প্রতিটি কারখানায় সিলেকটিভ বা ইলেকটিভ অংশগ্রহণকারী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আমি বেশ কিছু কারখানার অংশগ্রহণকারী কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে যতটা জেনেছি তা হলো কমিটিগুলো যথেষ্ট ইফেকটিভ নয়। আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং বিভিন্ন ধরনের অডিট পাশ করার জন্যই শুধু এই কমিটি করা হয়। অথচ এই কমিটিকে যদি ইফেকটিভ করা যায় তবে অবশ্যই শ্রমিক-মালিকের অধিকার রক্ষা হবে এবং কারখানায় সুন্দর ও সুস্থ্য কর্মপরিবেশ বিরাজ করবে। কমিটিকে ইফেকটিভ করতে অনেক মালিকই অনাগ্রহী নয় অবশ্যই। কিছু মিড লেভেলের কর্মকর্তাগণই এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ বলেই মনে করি। আবার কিছু কারখানার উদ্যোক্তার অনিহা তো অবশ্যই আছে। আমাদের ইতিবাচক মানসিকতা কারখানার পরিবেশকে মুহুর্তে কতখানি পরিবর্তন করতে পারে তা হয়ত আমরা নিজেরাও জানিনা! এখন সময় এসেছে নতুন করে কারখানার কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার। কারখানার কর্মপরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত হলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মিদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। পোশাকের গুনগত মান বৃদ্ধি পাবে। শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক হবে আরো দৃঢ় ও হৃদতাপূর্ণ।
কারখানার অনেক মালিকই হয়ত কোন শ্রমিকের নামই জানেন না আবার এমন কিছু মালিক অন্তত অবশ্যই আছেন যিনারা বেশ কিছু শ্রমিকের নাম জানেন। দেখা হলেই তাদের নাম ধরে ডাকার মতো মালিকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। মালিক যদি শ্রমিকের নাম ধরে জিজ্ঞাসা করেন তোমার বাবার অসুখ এখন কেমন ? অথবা বলেন তোমার স্ত্রীর ডেলিভারির যাবতীয় প্রস্তুতি ঠিক আছে কি ? যখন একজন মালিক কোন শ্রমিকের এমন খোঁজ নেন, তখন অবশ্যই ঐ শ্রমিকের বুকের ছাতি গর্বে আর শ্রদ্ধায় ফুলে ওঠে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঐ শ্রমিক অবশ্যই আরো বেশি আস্থশীল হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রমেই আস্থাশীল হয়ে ওঠার এই কারণ গুলো কিন্তু ধিরে ধিরে অনেকেই জানতে থাকেন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধার মানুষের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ভালো-মন্দ শ্রমিকের মধ্যে ভালো শ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। এভাবেই ধিরে ধিরে প্রতিষ্ঠানের প্রতি, মালিকের প্রতি শ্রমিকগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়, আর সুস্থ্য কর্মপরিবেশ গড়ে ওঠে। মালিকের দরজা শ্রমিকের জন্য যদি সব সময় উন্মুক্ত থাকে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবশ্যই শ্রমিকগণ আস্থাশীল হবে। শ্রমিকের কথাগুলো ধৈর্য্য ও মনযোগ সহকারে শুনলে অবশ্যই শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক হবে আন্তরিক ও সহনশীল।
কারখানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সবসময় ঠান্ডা ঘরে ল্যাপটপের সামনে বসে শুধু শুধু অস্থির হয়ে যায়, এমন ধারনা শ্রমিক বা অধস্তনদের জন্য খুব স্বাভাবিক। শ্রমিক ও মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টের অনেকেই হয়ত কারখানার লক্ষ্য পূরণের জন্য সিনিয়রের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় যা খুবই স্বাভাবিক। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞতার কারনে সিনিয়রদের প্রতি অবজ্ঞা তৈরি হয় জুনিয়রদের মাঝে। এছাড়া যেকোন সিদ্ধান্ত প্রদানে দীর্ঘসূত্রিতা ও সিদ্ধান্তহীনতাও অধস্তনদের মাঝে সিনিয়র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনার জন্ম দেয়। যা পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারখানার লক্ষ্য অর্জনের প্রধান অন্তরায় হিসাবে কাজ করে। কর্মকর্তাগণ ঠান্ডা ঘরে যে শুধু শুধু অস্থির হয়না এই কথাটি যেমন সত্য তেমনি সত্য হলো সুযোগ থাকার পরেও কর্মকর্তাগণ প্রোডাকশন ফ্লোরে হাটাহাটি করেন না। প্রতিদিন বা মাঝে মাঝে যদি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে মালিকগণও প্রোডাকশন ফ্লোরে হাটাহাটি করেন, প্রতিটি ফ্লোরের দুই/চারজন শ্রমিকের সাথে কথা বলেন তবে তারা কারখানার মালিক, ম্যানেজমেন্ট ও সর্বপরি কারখানার প্রতি অধিক শ্রদ্ধাশীল, আস্থাবান ও দায়িত্ববান হবেন। কারখানার মালিক বা টপ ম্যানেজমেন্ট যখন ফ্লোরে যান তখন সাথে অনেকেই থাকেন যার ফলে হয়ত অনেক শ্রমিকই তাদের মনের কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এক্ষেত্রে তাদেরকে একা একা বা এক/দুইজন সাথে নিয়ে ফ্লোরে যাওয়া ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলার পরামর্শই আমি উপযুক্ত মনে করি।
কারখানার ম্যানেজমেন্ট এবং টপ ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তাগণ যদি শ্রমআইন, বিধি ও কারখানার পলিসির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং তা বাস্তবায়নে কমপ্লায়েন্স টিমকে যথপোযুক্ত ক্ষমতা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন তবে শ্রমিক এবং স্টাফগণ কারখানার প্রতি অবশ্যই দায়িত্ববান হবেন। শ্রমিক ও স্টাফগণকে যেভাবেই হোক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাশীল হিসাবে তৈরি করতে হবে। নিয়মিত কার্যকরি প্রশিক্ষন ও তাদের সাথে কার্যকরি যোগাযোগ রক্ষা করতে পারলে তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। এক্ষেত্রে উৎপাদন, মানব সম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগ সহ সংশ্লীষ্ট সবার ভূমিকা থাকতে হবে মূখ্য। মানব সম্পদ ও কমপ্লায়েন্স ব্যতিত যদি তৎসংশ্লীষ্ট সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সরাসরি ম্যানেজমেন্ট বা উৎপাদন বিভাগ কর্তৃক তা পরিচালিত বা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া করা হয় তবে মানব সম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রতি শ্রমিক ও স্টাফগণ আস্থাহীন হবে যা পরবর্তিতে প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা ভঙ্গের প্রধান কারণ হিসাবে দেখা দিতে পারে। প্রতিষ্ঠানের পলিসি ও প্রচলিত আইন বা বিধি অনুযায়ী যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কমপ্লায়েন্স ও মানব সম্পদ বিভাগকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক উন্নয়নে কারখানার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয়। কারখানার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যদি ভেঙ্গে পরে তবে কারখানার উর্ধ্বগামী যাত্রা মন্থর হবে অথবা বাধাগ্রস্ত হবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে থেমে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে। কারখানার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে সঠিকভাবে চালাতে হলে কমপ্লায়েন্স বিভাগের ভূমিকাই প্রধান বলে মনে করি। তাই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে আলিফ লায়লা আর সিন্দাবাদের যুগ থেকে বের হয়ে এসে মানব সম্পদ ও কমপ্লায়েন্স বিভাগকে দক্ষ, যুগপোযুগী, আধুনিক ও উদ্দোমী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ক্যাপাসিটি অনুযায়ী দীর্ঘ্মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে সুস্থ্য ও সাবলিল পন্থায় এগিয়ে যেতে হবে। আন্তরিক ও মানবিক গুনাবলিকে প্রাধান্য দিলে কারখানায় মালিক-শ্রমিকের ভেদাভেদ হ্রাস পাবে। প্রতিটি শ্রমিকই মালিকের মতই যত্নবান হবেন প্রতিষ্ঠানের প্রতি। কিন্তু শ্রমিককে যত্নবান করে গড়ে তোলার দায়িত্ব মালিককেই নিতে হবে। এক্ষেত্রে উৎপাদন ও মানব সম্পদ বিভাগের দক্ষতা প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
উন্নত হোক মালিক-শ্রমিকের মানসিকতা আর মানবিকতা, শ্রদ্ধা আর দায়িত্ব বোধের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হোক আমাদের অগ্রযাত্রা। প্রতিষ্ঠিত হোক নির্ভেজাল মানবতা, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।
লেখকঃ ব্যবস্থাপক মানবসম্পদ ও কমপ্লায়েন্স