রানা ফরহাদ
( আরএমজি জার্নাল এ যারা অপরের কল্যাণে লিখছেন তাদের মাঝে লেখক অন্যতম। লীন নিয়ে তার এই ধারাবাহিক লেখাটি অদ্য ০২/০২/২০১৮ ইং তারিখে থেকে প্রকাশিত হবে। আমরা লেখকের লেখনীকে তার মত করেই উপস্থাপন করতে পছন্দ করি তাই কোন প্রকার এডিটিং ব্যতিরেকে লেখাটি হুবুহু প্রকাশিত হবে। মজাদার এ লেখার মাধ্যমে আশাকরি অনেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন।)
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!আমাদের সময়ের শক্তিমান কবিরা মরে গেছে সবার আগে (মুহম্মদ ইমদাদ বেশ আছেন আর পূনঃজন্ম নিয়েছেন ঋতো), ধুঁকে ধুঁকে টিকে ছিলেন প্রবন্ধকাররা। তাদের মাঝে একজনকে হুট করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “বহুদিন তোর নতুন কোন লেখা পাই নাই”।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছিলো, “লিখে আর কি হবে রে? সব নষ্টদের অধিকারেই গেছে।”
আমিও নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তথাকথিত কবিতা-গল্প লেখা ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে এই ফরমায়েশী লেখা লিখি। তবে লিখে কি হবে! আই-ই প্যারাডক্স পড়ে কেউ কি তার আই-ই বিভাগের কর্মীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “তাঈচি ঊনো কে ছিলেন?”
এসেছে নতুন প্রশ্ন, গোল্লায় যাক পুরাতন সব।
‘পুওর ম্যান’স প্রোডাকশন সিস্টেম কি?’ আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আই-ই কর্মীকে জিজ্ঞাসা করুন তো। আচ্ছা আমিই বলি, টয়োটা প্রোডাকশন সিস্টেম (টিপিএস) যা থেকে আজকের হট কেক লীন সিস্টেম-এর জন্ম, আমরা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীতে যা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখি, সেই সিস্টেমকে একদা ‘পুওর ম্যান’স প্রোডাকশন সিস্টেম’ বলা হত, মানে গরীবের সিস্টেম। “আমরাও একদা গরীব আছলাম এখন মধ্যম আয়ে উঠিয়ালচি, ফেক্টুরীও বড় হইয়্যা গ্যাছে। আমরাও হেল্পার কম্যাইয়া লীন করিয়ালচি”।
জয় বাবা লীন্টু!
উন্নতি অইচে কিন্তু…
এক কাপ চা
রানা বসে খা… (নগদে প্রমাণ দিয়ে দিলুম দাদা, একদা কবি ছিলুম মাইরি…)
উপহাস করবেন না বলে দিচ্চি। যাদেরকে যারা একদা গরীবের সিস্টিম বলি মজাক করিলো, সেই গরীব ভুখা নাঙ্গা ১৯৬৩ সালে আছিলো।
১৯৬৩ সাল নাগাদ ধনী আমেরিকার প্রসবকৃত গাড়ির সংখ্যা ছিলো ১,৯২৫,০০০ হালি আর ভূখা নাঙ্গা টয়োটা প্রসাইবাইছিলো ৭৫,০০০ হালি। আর আইজ সেই গরীব ভূখা নাঙ্গারা প্রসাইবাইতেছে ২,৫০০,০০০ হালি।
আজ গাড়ি প্রতি ১৪৭,৬০০ (ডলারের দাম ধরছি ৮২ টিয়া) লাভ করছে। তাদের লভ্যাংশ ফোর্ড, জেনারেল মোটরস আর ক্রাইসলার এর যোগ ফলের এক্কেলে সমান সমান।
কেমনে কি?
দাদা, জাপানে গিয়েছিলুম। দু-সপ্তাহ প্রশিক্ষণে একবারো ‘লীন’ শব্দ শুনি নাই, তারা বলে “টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট” সংক্ষেপে “টিকিউএম”। যাউজ্ঞা সামনের দিকে আউজ্ঞা। কেমনে কি বুঝতে হলে জানতে হবে এই টিকিউএম আর জাষ্ট ইন টাইম (জেআইটি) (যারা ভাবছেন, এই লেখায় আমি টিকিউএম বা জেআইটি-এর ফেক্টুরী ফেক্টুরী জ্বালো কইরবো, তারা ভুল ভেবেছেন। ওগুলা আমি টেকাটুকা নিয়া শিক্ষা দেই, শিক্ষা হইচ্ছে ব্যবসা, সেখানে ভেট থুক্কু ভ্যাট আছে।)
যা হোক আর তা হোক, ডাল হোক। অনেকেই মনে করেন এই টিপিএস হচ্ছে ডাল ভাত। যেমনঃ
১। জিরো ডিফেক্ট
২। অপচয় কমানো
৩। ১ পিছ ফ্লো
(আমাদের অনেকেই আবার ডালভাত মনে করে না, মনে করেন পান্তা ভাত। হেল্পার ছাড়া লাইন হইলেই হইলো… মামলা কেস, কাম শেষ)
ডেমিং স্যারের নাম তো শুনাই হোগা (আস্তে করে জিহ্বায় কামড় দিয়েন, তা না হলি কাটি যাবার পারে)। সেই ডেমিং স্যার ‘পিডিসিএ’ দিয়া কাইজেন বুঝাইয়া গেছেন। তার ১৪ প্রিন্সিপাল তো অনেক ফ্যাক্টরী সুন্দর করিয়া প্রিন্ট মারিয়া দেয়ালে লটকাইয়া রাখেন। অথচ ডেমিং স্যার তার ১৪ প্রিন্সিপালে বলিয়া গিয়াছেন যে এই সব লেখালেখি লটকাইয়া ফায়দা নাই গো বস!
এখন কাজের কথায় আসি। টয়োটা এখন মনপ্রাণ ঢেলে যে বিষয়টি চর্চা করে চলেছে তার নাম জাপানি ভাষায় ‘মনোজুকুরি ওয়া হিতোজুকুরি’। ব্যাপারটা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছেন, আমিও বুঝে ফেলেছি। এখন আসি এই ইজিমিজিজাপানিজি শব্দের মানে কি? এর মানে হচ্ছে “কোন কিছু তৈরী করার মানে হচ্ছে মানুষ তৈরী”। কি বুঝলেন? আমিও আসলে বুঝি নাই প্রথমে। পরে একটু গুগুল কইরা বুঝছিলাম যে টয়োটার একদা চেয়ারম্যান আইজি টয়োডা বলে গেছেন “গাড়ি বানাবার আগে মানুষ বানাও” অর্থ্যাৎ মানুষকে গড়ে তোল। পরে জন ওয়াই শুক বলেছিলেন এভাবে “Before we make our product, we make our people”.
লীন প্রিন্সিপাল ৪টি বিষয় নিম্নরূপঃ
১। লিডারদের কাজের স্টান্ডার্ড
২। ভিজ্যুয়াল কন্ট্রোল
৩। কাজের দৈনিক হিসাব নিকাশ
৪। সু-শৃঙ্খল লিডারশীপ
লিডারদের কাজের স্টান্ডার্ড ও লিডারশীপে সু-শৃঙ্খলতা বিষয়টি যা কি পরিমাণ কঠিন তা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না। ‘নানা মুনির নানা মতের’ এই দেশে একমত হওয়া বড়ই দূরুহ। আমি খুব কম প্রতিষ্ঠানে দেখেছি প্রোডাকশন-কোয়ালিটি-মেইন্টেনেন্স-এইচআর-আই ই- স্টোর- মার্কেটিং এর মাঝে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। ব্লেম গেম এদেশে ক্রিকেটের চেয়ে বড় জনপ্রিয় খেলা। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই সুন্দর করে মিশন ভীশন লেখা থাকে। বিভাগীয় প্রধানদের জিজ্ঞাসা করুন তো সে গুলা নির্ভূলভাবে বলতে পারে কিনা? কিংবা তা অর্জন করতে তার প্লান কি?
তাঈচি ঊনো লীনকে যে রূপ দিয়ে গেছেন তা প্রসেসে ভ্যালু বাড়ানো ও খরচ কমানো। অপচয় কমানোর উপর জোর দিয়ে গেছেন। ৭ ধরণের অপচয় আমাদের সবারই জানা। আসল উদ্দেশ্য ছিলো আসলে সমস্যাকে সারফেসে আনা মানে দৃশ্যমান করানো। তাঁর কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিলো একই সাথে খরচ কমানো, লীড টাইম কমানো, ক্রেতার সন্তুষ্টি বৃদ্ধি, কর্মীদের হতাশা কমানো, কোয়ালিটি উন্নয়ন ইত্যাদি।
ঊনো বলেছেন, “যখন অপচয় নির্মূল করার চিন্তা করছেন, দু’টি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে”।
(বিষয় দু’টির জন্য অপেক্ষা করুন। আজ ঘুম পাচ্ছে। আগামী লেখায় বিস্তারিত… চোখ রাখুন আরএমজি জার্ণাল-এর পর্দায়… )