আব্দুল আলিম :
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর যে কয়টি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের মাঝে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ অন্যতম । আর এই দেশের নাগরিক হিসেবে যা কিছু নিয়ে গর্ব করি তার মধ্যে পোশাকের গায়ে সাঁটা লেবেলে লেখা “মেইড ইন বাংলাদেশ” অন্যতম। ইউরোপ আমেরিকার নামী-দামী ব্র্যান্ডের দোকানে যেকোন পোশাক দেখলেই আমার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে লেবেল! দোকানের কর্মচারী মনে করেন দাম দেখছি, কিন্তু আসলে যে মনের ভিতর অন্য কিছু খুঁজে বেড়াই, তা হল “মেইড ইন বাংলাদেশ” লেখাটি! আর একবার মিলে গেলেই কেমন একটা প্রশান্তি কাজ করে।
আমাদের গর্বের “মেইড ইন বাংলাদেশ” ইতিমধ্যে চীনের পরের শ্রেষ্ঠতম স্থান দখল করে রেখেছে। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মালিক শ্রমিকের যৌথ সহায়তায় এগিয়েও যাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত। সামনে নতুন টার্গেট ৫০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানী করা। রানা প্লাজা ধ্বসের মত বড় ধাক্কাও সেই টার্গেট থেকে দূরে সরাতে পারেনি আমাদের সরকারসহ পোশাক খাতের নিপুন কারিগরদের।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঘরোয়া আলোচনা করতে গিয়ে উঠে এল থমকে যাওয়ার মত কিছু তথ্য। তুলা উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার মত উপযুক্ত একটি ডেনিম প্যান্ট উৎপাদনে মোট ১০০০০ (দশ হাজার) লিটার পানি খরচ হয় যার বড় অংশ খরচ হয় ডাইয়িং প্রসেসে। টাকা পয়সার মূল্যমানে পানির মূল্য নির্ধারণ বোকামী ছাড়া কিছুই নয় বুঝেও মনের সান্ত্বনার জন্য হিসেব কষতে গিয়ে পেলাম ওয়াসার (শিল্প কারখানাগুলি সাধারনত ওয়াসার পানি ব্যবহার করেনা) বর্তমান পানির মূল্য গ্রাহক পর্যায়ে ০১ পয়সা লিটার (১০০০ লিটার পানির মূল্য ১০ টাকা) অর্থাৎ ১০০০০ লিটার পানির মূল্য ১০০ টাকা। কারখানাগুলি নিশ্চয়ই লোকসানে থাকা ওয়াসার চেয়ে কম খরচে মাটির নিচ থেকে পানি উঠাতে পারেন না। মাটির গভীর স্তর থেকে উত্তোলিত পানি ডাইং এ ব্যবহার করতে গেলে আবার পানিকে একটি প্রক্রিয়ায় উপযুক্ত করতে হয়। সেখানেও রয়েছে খরচ। এবার ডাইয়িং ও ওয়াশিং (ওয়েট প্রসেস) এ ব্যবহৃত পানিকে কেমিক্যাল থেকে আলাদা করার (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট) করার খরচ ব্যবহৃত পানির মূল্য থেকে ৩ গুন। তাহলে একটি জিন্স প্যান্ট তৈরিতে আমাদের হিসেবযোগ্য খরচ কত? আর আলো, বাতাস, পানি সহ আমাদের পরিবেশের মূল্য কত?
আলো-বাতাস-পানি- মাটি আমাদের, আমাদের মেশিন আবার আমাদেরই মানুষ। সেক্ষেত্রে আমাদের পোশাকের মূল্য কত? কখনও কি ভেবেছি মাটির নিচের পানির স্তর প্রতি মুহূর্তে নেমে যাচ্ছে আরও নিচে। ওদিকে জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশ ২০৫০ সালের মধ্যে পানির নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা কি তাহলে আমেরিকা, চীন, ভারত বা আফ্রিকা থেকে তুলা কিনে এনে আমাদের শ্রমিকের রক্ত আর সৃষ্টিকর্তার উপহার পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানকে কাঁচামাল হিসেবে যুক্ত করে সেটাই রপ্তানী করে দিচ্ছি? তাইতো মনে হয়। এদেশের রপ্তানীকৃত পোশাকে সরাসরি আমাদের উৎপাদিত কাঁচামাল কি আছে? আপাতত খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে যা যুক্ত করছি তা হল আমাদের শ্রমিকের রক্ত পানি করা ঘাম, আলো-বাতাস, পানিসহ আমাদেরই পরিবেশ। আমাদের পোশাক শিল্পের বড়কর্তারা কি কখনও এই পরিবেশের মূল্য চেয়েছেন দুনিয়ার সব বড় বড় ব্র্যান্ডের কাছে? চাইলেও কি পেয়েছেন? পেলেও কি ফেরত দিয়েছেন পরিবেশের অন্যতম অংশীদার এ দেশের সকল জনগনের কাছে? বিশ্ব পোশাক বাণিজ্যে এগিয়ে আমরা, আরও এগিয়ে যেতে চাই তবে সেটা যেন পোশাক বাণিজ্যই থাকে তা যেন পরিবেশের বাণিজ্য না হয়। পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট সকলের সচেতনতা চাই, চাই গঠনমূলক ও টেকসই উন্নয়ন।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দি আরএমজি টাইমস