fbpx

মুহাম্মদ  জসীম উদ্দীন  

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আল্লাহ নিজে সুন্দর তাই তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন। সাধারণত বেশীরভাগ মানুষও সৌন্দর্য প্রিয় এবং সৌন্দর্যের চর্চা করতে ভালবাসে। সুন্দরের প্রশংসা করেন না এমন কৃপণ এই ভবে খুব কমই আছে। তাই যে যেখানে যেভাবেই থাকিনা কেন আমাদের যা কিছু আছে তা আমরা সুন্দর রাখতে বদ্ধ পরিকর। যেকোন বস্তু থেকে শুরু করে মানুষ, প্রাণী, পশু-পাখি, নদী, সাগর, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে যেমন সুন্দর হয় তেমনি মানুষ নিজ প্রয়োজনেও সুন্দর করে নেয় তার চারিপাশের পরিবেশ। কারণ সুন্দর মন মানসিকতার পিছনে সুন্দর পরিবেশের বড় অবদান রয়েছে।

বাসস্থান থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, হোটেল, আরএমজি কারখানা সহ অন্যান্য কারখানা, বিমান, হাসপাতাল অর্থাৎ যেখানেই মানুষের বিচরণ আছে সব স্থান বা জায়গা আমরা সাজানো গুছানো কামনা করি।  কোন হাসপাতাল যদি নোংরা ও অগোছালো হয় তাহলে সেখানে কোন রোগী যাবেনা যেমন সত্যি তেমনি কোন দোকান যদি দেখতে সুন্দর না হয় তাহলে সেখানেও কোন ক্রেতা যাবেনা। আবার যেই স্কুল বা কলেজের ক্যাম্পাস সুন্দর তার পড়ালেখার পরিবেশও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ভালই হয়। অর্থাৎ আমাদের সকল কর্মকান্ড, মন মানসিকতা, সুস্থতা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। তাই আমরা যে যেখানে যেই কাজই করি না কেন আমাদের কর্ম পরিবেশ হতে হবে সুন্দর, গোছানো ও দৃষ্টিনন্দন। তাহলে একদিকে যেমন মন মানসিকতা ভাল থাকবে তেমনি আমাদের কাজের মানও হতে হবে অনেক উন্নত। আর এই সুন্দর পরিবেশ ও গুছানো কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা আমরা পেতে পারি 5 “s” থেকে।

5”S” কি (What is 5”S”)?

ইন্টারনেট এবং গুগলের আবির্ভাব ও সহজলভ্যতার ফলে আমরা যেকোন জিনিস সম্পর্কে খুব সহজেই  মৌলিক একটি ধারণা পেতে পারি। তবে প্রথমবারের মত তার নাম বা কার্যক্রম সম্পর্কে একটা ইনফরমেশন পেলে তা সহজ হয়। 5”S” এর আবির্ভাব ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর পরই জাপানে হলেও আমাদের দেশে খুব বেশী দিন আগে এই নাম আমরা শুনেছি বলে মনে হয়না। ১৯৯০ সালে এস এস সি পাশের পর থেকে সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তব্য, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা কোথাও এই সংক্রান্ত কোন নাম বা ধারণা আমরা পাইনি। কেবল কর্মজীবনে না, ছাত্র জীবনেও যে এর অত্যন্ত কার্যকরী প্রভাব আছে তা 5”S” সম্পর্কে জানলে উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসবের কোন কদর নেই। পাছে ছাত্রছাত্রীরা আবার পাশ করার আগেই অভিজ্ঞ হয়ে যায় কিনা? অভিজ্ঞতার প্রশ্ন যখন এসেই গেল তখন কিঞ্চিত বাক্য দিয়ে একটু ইতি টানা যাক। ধরুন ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে একজন ছাত্র/ছাত্রী যদি 5S” এর সাথে পরিচিত হয় তাহলে ১০ম শ্রেণী পাশ করতে করতে সে এই সংক্রান্ত বেশ ভাল জ্ঞানের অধিকারী হবে এবং যেহেতু এটি শুধুমাত্র থিওরী নির্ভর নয় সেহেতু স্কুলের লাইব্রেরী, বাগান, মিলনায়তন, নিজ নিজ গৃহ, শ্রেনীকক্ষ, স্কুল অফিস ইত্যাদি স্থানে ব্যবহারিকভাবে এটা প্রয়োগ করলে তা তাদের পড়ালেখা শেষে অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অন্তত একটু হলেও কাজে লাগবে । এখন আসল কথায় আসি। এখন থেকে ঠিক ১০ বছর আগে আমি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় 5S” এর সাথে পরিচিত হই এবং ট্রেনিং গ্রহণ করি ও আংশিক বাস্তবায়নে কাজ করি।

5S” হল আলাদা আলাদা ৫টি শব্দ যা মূলত জাপানী ভাষা কিন্তু ইংরেজীতে লিখলে সবগুলোর শুরু হয় “S” দিয়ে। হাউজকিপিং (Housekeeping) শব্দটি বা এ ধরণের কাজের সাথে যারা পরিচিত তাদের কাছে অন্য যেকোন বিষয়ের চেয়ে এই 5“S” এর গুরুত্ব কিছুটা বেশী । বলা যায় 5 “S” হল একটি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত পন্থা বা নির্দেশিকা যা উন্নতমানের হাউজকিপিং বাস্তবায়ন ও ধরে রাখতে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে।

5 “S” এর জাপানী শব্দগুলো হল “Seiri”, “Seiton”, “Seiso”, “Seiketsu” এবং “Shitsuke” আর এর ইংরেজী শব্দগুলো হল “Sorting”, “Set in Order”, “Shine”, “Standardize” এবং “Sustaining”। এই জাপানী এবং ইংরেজী শব্দগুলোকে বাংলায় অনুবাদ করলে অনেক ভাবেই করা যাবে কিন্তু মনে রাখার সুবিধার্থে আমরা এই শব্দগুলোকেও “স” দিয়ে করেছি আর তা হলঃ সংগঠিত করা, সাজানো, সাফ করা, সহনীয় করা ও সংরক্ষণ করা। নিচে আরেকটু বিস্তারিতভাবে সংজ্ঞা দেয়া হলঃ

# SEIRI (Sorting) সংগঠিত করাঃ কর্মস্থলের সমস্ত মালামালকে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় এই দুইভাবে ভাগ করা এবং অপ্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে ফেলা।

# SEITON ( Set in Order) সাজানোঃ প্রয়োজনীয় মালামালগুলোকে সুনির্দিষ্ট তথ্য সহ সাজিয়ে রাখা যাতে সঠিক সময় তা কাজে লাগানো যায়।

# SEISO (Shine) সাফ করাঃ প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতি অথবা টুলস ইত্যাদি পরিস্কার করা এবং কর্মস্থলের মেঝে এমন ভাবে পরিস্কার করা যাতে কোথাও কোন ধুলাবালি না থাকে।

# SEIKETSU (Standardize) উল্লিখিত ৩ “স” কাজের একটি সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারন করে তা বাস্তবায়নে কাজ করা। এ ক্ষেত্রে KAIZEN এর আরেকটি টুলস PDCA (Plan, Do, Check, Act) এ অনুসরণ করা উত্তম।

# SHITSUKE (Sustaining) সংরক্ষণঃ নির্ধারিত মান ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং অডিটের ব্যবস্থা করা।

5-S বাস্তবায়নের সুবিধাঃ 5-S শুধুমাত্র কর্মস্থলকে সুন্দর ও গুছানোই করেনা এটি-

১। অপচয় রোধে অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।

২। দ্রুততম সময়ে সঠিক মালামাল খুজে পেতে সাহায্য করে।

৩। অল্প জায়গায় অধিক মালামাল রাখা যায়।

৪। কর্মস্থলের পরিবেশ সুন্দর রাখে।

৫। এটির বাস্তবায়ন ও ফলাফল সহজেই পরিলক্ষিত হয়।

৬। এটি সবাই পছন্দ করে।

৭। এটি বাস্তবায়নে তেমন কোন আর্থিক খরচের প্রয়োজন হয়না।

৮। এটি ছোট বড় যেকোন আরএমজি /অন্যান্য কারখানায় বা স্থানেই বাস্তবায়ন করা যায়।

৯। কারখানা বা কর্মস্থলের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

১০। মেশিন ও যন্ত্রপাতির সময় কাল বৃদ্ধি পায় ও উৎপাদন সক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে।

১১। মেশিন shut down কমে যায়।

১২। লাইন brake down কমে যায়।

১৩। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

১৪। কোম্পানীর প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক।

উল্লিখিত 5“S” এর মধ্যে প্রথম 3“S” হল ব্যবহারিক আর পরের 2“S” হল পলিসিগত এবং নিরীক্ষণ  সংক্রান্ত। এখন 5 “S”  বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক।

5S” বাস্তবায়ন পদ্ধতিঃ

১। কর্মক্ষেত্র বাছাই/নির্ধারনঃশুরুতেই পুরো কর্মস্থলকে নির্বাচন না করে একটি নির্দিষ্ট এরিয়া বা ডিপার্টমেন্টকে বাছাই করে নিয়ে পরীক্ষামূলক বা অনুপ্রেরণামূলক প্রজেক্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে হবে।

২। টিম গঠন করাঃ 5 “S” বাস্তবায়নের জন্য যে কর্মস্থলকে নির্বাচন করা হয়েছে তার সাথে সংশ্লিষ্ট জনবলের সমন্বয়ে একটা 5“S” কমিটি গঠন করতে হবে। বিভাগীয় প্রধানকে উক্ত কমিটির সভাপতি করাই উত্তম।

৩। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততাঃ 5“S” কর্মসূচী সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ন। বলা যায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মন মানসিকতার উপরই 5“S” এর বাস্তবায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল।

৪। ট্রেনিংঃ 5“S” সম্পর্কে জানেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন এমন কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ট্রেইনারের মাধ্যমে অথবা অন্য যেকোন রিসোর্সের মাধ্যমে 5“S” কমিটিকে কয়েকটি ধারাবাহিক ট্রেনিং করাতে পারলে 5“S” এর বাস্তবায়ন খুবই সহজ এবং টেকসই হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে কমিটির সভাপতি সহ গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদেরকে অন্য কোন ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং করাতে হবে এবং উক্ত সভাপতি নিজ কর্মক্ষেত্রে 5“S” বাস্তবায়ন কমিটিকে নিয়ে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবে।

৫। পরিকল্পনাঃ ট্রেনিং কার্যক্রম এর পর 5“S” বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে 5“S” এর 5 লেভেলকে সামনে রেখে। আপনার প্রতিষ্ঠান 5“S” এর ৫ লেভেলের কোন লেভেলে থাকতে চায় তার উপর নির্ভর করে।

৬। 5“S” এর 5 লেভেল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা বা জ্ঞানঃ 5“S” এর 5 লেভেল হল- (1) Unacceptable, (2) Conditionally Acceptable, (3) Good, (4) Very Good এবং (5) International লেভেল। ট্রেনিং এর মাধ্যমে এই ৫ টি লেভেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।

৭। PDCA (Plan, Do, Check, Act) সম্পর্কে জানাঃ 5“S” বাস্তবায়নে PDCA অত্যন্ত কার্যকর একটি পন্থা। ট্রেনিং এর সময় এই PDCA সম্পর্কে জানা যাবে আবার গুগলের মাধ্যমেও এই সম্পর্কে মোটামুটি ভাল ধারনা পাওয়া যেতে পারে।

৮। উপরোক্ত প্রস্তুতির পর গৃহীত কর্মসূচী আনুষ্ঠানিক ভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন শুরু করা।

৯। দৈনিক এবং সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ পরিচালনা করা এবং স্কোরিং করা।

১০। প্রজেক্ট কর্মসূচী বাস্তবায়নের পর ক্রমান্বয়ে এক এক করে পুরো কর্মস্থানকেই 5“S” এর আওতায় নিয়ে আসা।

5”S” বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জঃ আমাদের দেশের একটা সাধারণ সংস্কৃতি হচ্ছে, কোন কিছু শুরুতে খুবই আগ্রহ থাকে এবং আমরা রাতারাতি কিছু একটা করে ফেলার আবেগী কর্মসূচী গ্রহণ করি যেখানে এর বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি থাকেনা। দুনিয়ায় এমন কোন কাজ নেই যেটা চ্যালেঞ্জ ছাড়া বাস্তবায়ন হতে পারে। বিশেষ করে ভাল কোন কাজতো অবশ্যই নয়। এখন দেখি এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে কি কি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হবার আশংকা আছে এবং যারা শুরু করেও কাংখিত লক্ষ্যে যেতে পারেনি তাদের কি সমস্যা ছিল।

১। তাড়াহূড়া করাঃ যে কোন কাজই তা সে যত সহজই হোকনা কেন তাড়াহূড়া করে করার উচিৎ নয়। প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ধীরে সুস্থে নিতে হবে। আবার তার অর্থ এই নয় যে একদম শামুকের গতিতে চলা। মূল কথা একটা ভারসাম্যপূর্ণ গতিতে কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু আমাদের অনেক ম্যানেজমেন্ট এই ক্ষেত্রে অনেক বেশী তাড়াহূড়া করে এবং রাতারাতি সফলতা কামনা করে যা মোটেই কাম্য নয়।

২। অপর্যাপ্ত প্রস্তুতিঃ অনেকেই প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক প্রস্তুতি ছাড়া এবং টিমের অন্যান্য সদস্যরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই কাজ শুরু করে যার কারণে কাজের গতি কাঙ্ক্ষিত আসেনা বা প্রেশারাইজ করে কাজ করলেও তাতে আন্তরিকতার অভাব থাকে। যার ফলে বাস্তবায়নে কাজের গতি ধীর হয় এবং একটা সময় হতাশা গ্রাস করে।

৩। অদক্ষ নেতৃত্বঃ যে কোন কর্মসূচীর মত 5“S” বাস্তবায়নেও নেতৃত্ব একটা প্রধান বিষয়। অনেকেই যার যেই জনবল আছে তা দিয়ে কাজ শুরু করে দেয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যাকে লিডার করা হয়েছে তার ভিতরেই প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা আগ্রহের ঘাটতি আছে। ফলাফল কিছুদিন পর কর্মসূচী মুখ থুবড়ে পড়ে।

৪। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনিহাঃ অনেক ক্ষেত্রে টপ ম্যানেজমেন্ট 5“S”  বাস্তবায়ন কর্মসূচী গ্রহণ করলেও কাজের প্রেশারে বা সিডিউল বিপর্যয়ের কারনে 5“S” বাস্তবায়নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং ধীরে ধীরে তা একসময় বন্ধ হয়ে যায়।

৫। পুরোনো ধ্যান ধারনা আঁকড়ে ধরাঃ কিছু মানুষ সবসময় পুরোনো ধ্যান ধারনা নিয়ে পড়ে থাকতে চায় এবং পরিবর্তনকে ভয় পায়। নিজেদের জ্ঞানের স্বল্পতাকে আড়াল করতে এবং নতুন যোগ্যদের সম্মান দেবার মত সৎ সাহস না থাকার কারনে এরা পরিবর্তন চায়না। আপনি যদি এই ধরনের বসের অধিনস্থ হয়ে থাকেন তা হলে 5“S” বাস্তবায়ন কর্মসূচী হাতে না নেয়াই ভাল।

৬। লেগে না থাকাঃ যেকোন কাজ বা কর্মসূচী বাস্তবায়নে লেগে থাকা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুরুতেই  কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে অথবা কোন চ্যালেঞ্জের সম্মূখীন হয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়। জরুরী কোন কারণে কর্মসূচী বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও সময় সুযোগ করে পুনরায় কর্মসূচী চালু করা যেতে পারে। অন্যথায় উক্ত প্রতিষ্ঠানে চিরদিনের জন্য ভাল কাজের সুযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৭। মাইগ্রেশনঃ আমাদের দেশে বিভিন্ন কারনে শ্রমিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাইগ্রেশন বেশী, বিশেষ করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে । অন্যান্য কারণগুলোর মত এটাও যে কোন কর্মসূচী কিংবা 5“S” বাস্তবায়নের একটি বড় বাঁধা। কোন টীম লীডার কাজ শুরু করার মাঝখানে অন্যত্র চাকরী নিয়ে চলে গেলে চলমান কর্মসূচী এগিয়ে নিয়ে যাবার মত লোক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকেনা, ফলে 5“S” বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ বা স্থগিত হয়ে যায়।

উপসংহারঃ উল্লিখিত বাধা বা চ্যালেঞ্জ ছাড়াও স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকাটা স্বাভাবিক। একজন যোগ্য লীডারের নেতৃত্বে একটা চৌকস টীমই  পারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কর্মস্থলকে নিয়ে যেতে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমাদের দেশে অনেক যোগ্য লোক আছে যারা কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতীয়, শ্রীলংকান বা চাইনিজদের চেয়েও অধিক যোগ্য। শুধু মাত্র ভাল কর্ম পরিবেশ বা দিক নির্দেশনার অভাবে অনেক পিছিয়ে আছে আর আমরা ২/৩ হাজার ডলার বেতন দিয়ে অন্য দেশের লোকদেরকে বস বানিয়ে পুজো করছি। আমাদেরকে দেখতে হবে এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারলে আমাদের প্রত্যেকটি কর্মস্থল হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক মানের এবং আমরা হব রোল মডেল। শুধু কাঠামোগত চাকচিক্য দিয়ে গ্রীণ ফ্যাক্টরী করে অভ্যন্তরে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষতা সম্পন্ন  ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাজ করালে চীনসহ আন্তর্জাতিকভাবে বহু রাষ্ট্রের  সাথে পেরে উঠা সম্ভব হবে না। আসুন সবাই এগিয়ে আসি নিজেকে পরিবর্তন করতে, দেশকে পরিবর্তন করতে, আমাদের আরএমজি সেক্টরকে বিশ্বব্যাপী অন্যতম শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর  করাই হোক আমাদের মূল লেখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!