fbpx

Md. Walidur Rahman Biddut

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আমরা সবাই অবশ্যই অভিজ্ঞ কর্মী ও টিমমেট পছন্দ করি এর একটি বড়কারন হল, আমরা ধরে নিই, বছর বছর অভিজ্ঞতা অর্জন কর্মীকে আরওশানিত ও বিজ্ঞ করে যদিও, অধিকাংশ সময় তা হলেও, সব সময় তা হয়না অভিজ্ঞতা কখনো কখনো বিট্রেও করে। অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা সবসময়সমার্থক হয় না ।অভিজ্ঞতা হতে সত্যি সত্যি আমরা কী পেতে চাই-সেটিআবার একটি বড় সংখ্যক মানুষের কাছে অস্পষ্ট। যাহোক।

তবে, একটি বিষয় নিশ্চিত। অভিজ্ঞতা সবসময় কর্মীর ভেতরে নেতৃত্ব দেবারপরিপক্কতা তৈরী করে না। অভিজ্ঞতা সাধারনভাবে পেশাগত ও কৌশলগতদক্ষতা বাড়াতে পারে।তবে নেতৃত্ব এক ভিন্ন ও বিশেষ যোগ্যতা। অভিজ্ঞমানেই যে টিমের নেতৃত্ব দেবার পূর্ণ যোগ্যতা তার মধ্যে তৈরী হয়ে গেছেই-এইধারনার বশবর্তি হয়ে কাউকে টিমের নেতৃত্ব দেবার, ম্যানেজারিয়াল অথরিটিও লোড দেবার, লিডারশিপ রোলে উঠিয়ে দেবার কাজটি করবার আগে তাই ভাবতে হবে।

টিমের নেতৃত্ব, লিডারশিপ, ম্যানেজারিয়াল এক্সপোজার একটি বিশেষযোগ্যতা। এর জন্য ব্যক্তিকে বিশেষ ও নিবিড় চেষ্টা, প্রশিক্ষণ, নারচার করেযেতে হয়। সেটি না দিয়ে থাকলে, কেবলমাত্র বয়স ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেপজিশন আপ করা আত্মঘাতি। আর বয়সে সিনিয়র মানেই ভাললিডার-এটাতো ডাহা মিথ্যা। লিডারশিপ মানুষের সহজাত ক্ষমতা-সেটিসত্যি। আবার, এটি একটি নির্মানযোগ্য ক্ষমতাও।

যাহোক, আজ লিডারশিপের বয়ান নয়, আজ ফোকাস হল চাকরির বয়স, অভিজ্ঞতার দাম আর গ্রোথের মরিচিকা।

১,০০০ তম দিন পার হবার পরের দিনই নতুন চাকরিতে ঢোকাফরজ-ওয়াজিব-এমন একটি বদ্ধমূল বিশ্বাস আমাদের মন মগজে নানাকারনেই প্রোথিত হয়ে গেছে। এই ফর্মুলার সপক্ষে আমি নিজেও যথেষ্টলিখেছি। এখনো আমি এর বিরোধী নই। অনেকের প্রশ্নের জবাবে আমিএ-ও  বলেছি, যে, আপনি যদি চাকরির জান্নাতেও থাকেন, তাহলেও ৩ বছরপরে আপনার জান্নাতের স্তর বদল করার চেষ্টা করা শ্রেয়। তবে হ্যা, জগতেকোনো কিছুই এক্সট্রিম নয়। কোনো সত্যই এ্যবসলুট নয়। বিশেষ করে, তত্বের প্রয়োগ অনেক অনেক সাবধানে, বিবেচনার সাথে এবং অগ্রপশ্চাতভেবে করা উচিত।

আমার কাছে মনে হয়, ক্যারিয়ার গ্রোথ ও ক্যারিয়ারিজম নিয়ে আমাদেরঅতি কথন এবং অযোগ্যদের প্রচুর ভুল কথন বাজারে একটি ভুল বার্তাদিয়েছে এবং একটি ভুল চর্চাকে প্ররোচিত করেছে। বিশেষত ফেসবুক ওলিংকডইনের মতো উন্মুক্ত মাধ্যমে যখন সবাইই দিগগজ বনে যান, সবাইই কনসালট্যান্ট ও বিশেষজ্ঞ বনে যান, দুই দিন প্রফেশনে আসা মানুষটাওযখন জ্ঞানগর্ভ আর্টিকেল প্রসব করতে শুরু করেন আর ফেসবুকই যখন হয়েযায় এনসাইক্লোপিডিয়া, তখন ভুল বার্তা যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। যদিওআমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও চাকরির বাজারে আমাদের অনুসৃতভুল প্রবণতার জন্য বহুলাংশে দায়ী।

ভুল চর্চা বা প্রবণতাটি হল, নবীন, অথবা, বিগিনার অথবা ফ্রেশারদেরভেতরে প্রথম কিছু বছরে ধুমধাম ৩/৪ টা চাকরি বদল করে অতি দ্রূত ৬ডিজিটের বেতন, ডেডিকেটেড অফিস কার ও ম্যানেজার পদে আসীন হবারপ্রবণতা। ম্যানেজার হবার কাবেলিয়াত অর্জন বহুদূর, কিন্তু, ম্যানেজার হতেহবে। অথচ, অভিজ্ঞতা বলে, আমাদের বিপুল সংখ্যক ম্যানেজারের ভেতরেম্যানেজারিয়াল ও লিডারশীপ ক্যাপাবিলিটি একদমই নেই। আমি বিগতঅন্তত ১ বছর ধরে সচেতনভাবে অবজারভ করে দেখেছি, যে, একটি বড়সংখ্যক বিগিনার লেভেল কর্মী প্রথম চাকরিতে ঢুকেই ৪/৫ মাস যেতেই পরেরচাকরির জন্য রাস্তায় নেমে পড়ছেন।

পরের চাকরিটাতে ঢুকেই বছর খানিক যেতে না যেতেই আরেকটা চাকরিরচেষ্টা। সেটাতে থাকতে থাকতেই পাশাপাশি ইন্টারভিউ দিতে থাকা। ব্যাটেবলে হলে উড়াল। এভাবে প্রথম ৫ বছরের মধ্যেই ৩টা চাকরি, ১৫০% স্যালারি রেইজ আর ‘এ্যইশটেন ম্যানেচার’ পজিশন বাগানোর একটা ট্রেন্ডখুব প্রচলন হয়েছে।

কারন হিসেবে বলা হচ্ছে, বাজারের প্রচলিত খাসলত, এমপ্লয়ারদের দোষ, জীবনযাপনের খরচের আগুন শিখা, বাড়তি দায়ীত্বের চাপ, পরিবারেরদায়ীত্ব নেবার সীমাহীন চাপ, এবং খুব হাস্যকরভাবে ”নতুন নতুন অভিজ্ঞতাও শেখার সুযোগ” নেবার জন্য তাদের এই দৌড়ঝাঁপ।

৬ মাস চাকরি হয়েছে। যখন জানতে চাইছি, কেন চাকরি বদল করতে চান, “স্যার, নতুন অভিজ্ঞতা নিতে আর নতুন চ্যালেঞ্জ শিখতে।” বাপরে বাপ, ৬মাসেই তার একটি বিজনেসের অভিজ্ঞতা নেয়া শেষ। মনোটোনাস ওস্টেরিওটাইপ হয়ে পড়েছেন মাত্র ৬ মাসেই। আন্ডারটেকারের বড় ভাইচ্যালেঞ্জটেকার।

নতুন জবে ঢুকছেন। ঢুকেই গা হতে কোটটা খুলে চেয়ারে আসীন হবারআগেই আবার নতুন জবের সার্চ চলছে। ৯ মাস ঘুরতেই মেইলেরেজিগনেশন লেটার, সুর আগেরটাই-নতুন অভিজ্ঞতা দরকার। কেউ কেউরেজিগনেশন দেবার দায়ও নেন না। বেতনটা নিয়ে সোজা পরপারে। একটুভাল যারা, তারা সারাদিন কাজকাম করে বিকেলে যাবার আগে একটাগণমেইল ছেড়ে দিয়ে পরের দিন হতে গায়েব। ১ মাস সময় দিয়ে যাবারওসময় নেই। অভিজ্ঞতা দরকার যে।

আমি একটুও বলছি না, যে, চাকরি খোঁজার কাজটি ভুল, বা, অন্যায়।চাকরি বদল অন্যায় হতে পারে না। দ্রুত বদলেরও নানা বাস্তবতা থাকে।বিদ্যমান জবে কখনোই উচ্চমাত্রার উল্লম্ফন হয় না। অভিজ্ঞতা ও বৈচিত্রঅর্জনের জন্যও চাকরি বদল জরুরী।

কিন্তু, প্রবণতা? প্রবণতা ভিন্ন জিনিস। আর ওই যে, ট্রেড অফ বলে একটাকথা আছে না। এই বাস্তবতারও ট্রেড অফ আছে।

এই প্রবণতা এমপ্লয়মেন্ট মার্কেটকে অস্থির করছে, ভারসাম্যহীন করে দিচ্ছে, রক্ষণশীল করে দিচ্ছে। একই সাথে, এই সুইচাররা পারটিকুলারলি কোথাওহতেই কিছু নিতে পারছেন না। ‘কিছু’ বলতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, পরিপক্কতা, ব্র্যান্ড ভ্যালু ইত্যাদি। তারা যেহেতু সারাক্ষণইঅন্যত্র জব খোঁজা ও পাবার পেছনে মন লাগিয়ে রাখছেন, তাতে নিজবিদ্যমান চাকরি, চাকরিস্থল হতে কিছু ইনটেক হবার পথ স্বাভাবিকভাবেইসংকুচিত থাকবে।

ফলাফল, ৫ বছরের ক্যারিয়ারে ব্যক্তি ম্যানেজার হয়ে বসে যান। ৭ বছরেজি.এম। ১০ বছরে সি.ই.ও। জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার পাল্লা শূন্য।পরিপক্কতার প্রশ্নই নেই। আর, তাকে তো আরও বছর বিশেক চাকরি করতেহবে। এর মধ্যে বাজারের সবক’টা উপযুক্ত ও কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে তার চাকরিকরার সাইকেল তো শেষ। এখন কোথায় চাকরি করবেন? তাকে কোনপ্রতিষ্ঠান কী পজিশন দেবে-তাই নিয়ে বিপদে পড়ে। তিনিও সি.ই.ও হয়েতারপর ১২ তম বছরে আবার সিনিয়র ম্যানেজার হয়ে আবার জীবন শুরুকরেন।

কেউ কেউ আবার কোথাও কিছু হবার নয়-সেটা নিশ্চিত হলে কনসালট্যান্টবনে যান। আমি বলছি না, কনসালট্যান্সি খারাপ বিষয়। অবশ্যইকনসালট্যান্সি দরকার, আর কনসালট্যান্ট হবার জন্য দাড়ি পাঁকার বয়সহওয়া জরুরী না। কিন্তু, কনসালট্যান্ট হতে হবে প্ল্যান করে। সব উপায় ব্যর্থহবার পরে শেষ প্রেসক্রিপশন হিসেবে কনসালট্যান্সি তো নিজেই রুগ্নব্যবস্থাপনা।

তার মধ্যেও একটা বড় সংখ্যক প্রতিষ্ঠান বা তাদের HR এর ভেতরে উচ্চমাত্রার রিজিডিটি ও প্রিজুডিস রয়েছে, যারা মনে করেন, Frequent flyer বাজব হপারদের রি-হায়ার করা রং হায়ার হবে। এমন চাকরি প্রত্যাশীদের তারাপ্রেফার করেন না। রেজুমি দেখেই রিজেক্ট করে দেন। হ্যা, বাজারে এখনো বহুপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এমন কর্মীকেই হায়ার করতে উদগ্রীব। কোনো কোনোএইচ.আর স্রেফ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, অথবা, আগে কয়টা স্টারপ্রতিষ্ঠানে ছিলেন-সেটাকেই চুড়ান্ত কমপিটেন্সি মনে করেন।

“আপনি ……মিয়া এ্যন্ড কোংয়ে ছিলেন, আসুন স্যার, ঢুকে পড়ুন, ঢুকেআমাদের ধন্য করুন। আমরা আপনাকেই খুঁজছিলাম।”

এরই মধ্যে আরও একটা ভুল ন্যারেটিভ তৈরী হচ্ছে প্রফেশন ও ক্যারিয়ারেরচৌহদ্দিতে।

সেটা হল ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স।

তরুণ, নবীন, ফ্রেশাররা জবে ঢুকবার আগেই হিসেব নিকেষের খাতা খুলেবসছেন, যে, যে চাকরিটা পাওয়া যাচ্ছে, সেটাতে কী পরিমান বিশ্রাম, ছুটি, ছুটিএনজয় করবার মতো সুপ্রচুর টাকা, রিল্যাক্স, লো-চ্যালেঞ্জ রেট ইত্যাদিমিলবে। চাকরিটা অফিসে হবে কিনা, কর্পোরেটে হবে কিনা, ফিল্ড জব যাতেনা হয়, সেলসে জব যাতে না হয়, রিমোট এলাকায় অফিস যাতে না হয়।

আবার, কেউ কেউ যাস্ট একটা ব্রেক থ্রু পাবার জন্য ফিল্ড বা ফ্যাক্টরিতেজয়েন করলেও সারাক্ষণ মাথার ভেতরে চিন্তা, কবে কর্পোরেটে যাবেন।কারখানায় যিনি জবে ঢুকছেন, তার মাথায় তাড়া, কবে বায়িংয়ে যাবেন।ফিল্ড সেলসে যিনি ঢুকছেন, ভালও করছেন, তার মাথায়ও চিন্তা, কবে হাবেযাবেন। হাবে যিনি আছেন, তিনি অস্থির, কবে সেন্ট্রাল অফিসে পোস্টিংহবে। কবে অফিস বেজড জব হবে। গরীব একটি দেশে অফিস জবের জন্যসার্বজনীন হাহাকার আমাদের শিক্ষাক্রম ও পেশাগত বাস্তবতারহ-য-ব-র-ল মেলবন্ধনকে উগ্রভাবে প্রকাশ করে। গরীব দেশে মানুষ কাজকরবে মাঠে, ঘাটে, রাস্তায়, পাহাড়ে, বাগানে, কারখানায়, জঙ্গলে, বাজারে।এখানে সবাই যদি এসি দেয়া ঠান্ডা রুমের জবের জন্য পাগল থাকে, তাহলেবিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি চালাবে কারা? কৃষি কারা দেখবে? ম্যানুফ্যাকচার কেকরবে? মাইনিং দেখবে কে?

গরীব দেশে হোয়াইট কলার জব একটা সাদা হাতি মাত্র। তিক্ত সত্যি হল, আগামি ২০ বছরে আমরা যেমন দেশই হই না কেন, এই ২০ বছর আমাদেরডমিনেটিং ক্যারিয়ার ও জব হবে ম্যানুফ্যাকচারিং, ফিল্ড, সেলস কিংবাটেকনিক্যাল বা টেকনোলজিক্যাল। অফিস বেজড ক্লারিক্যাল বা মাউসঘোরানোর জব এই বিশ বছরে ডোমিনেটিং হবে না। দুঃসংবাদ বা সুসংবাদ।

আগের কথায় ফেরত আসি। এই দেশে এটা কেউ ভাবতে প্রস্তুত নয়, যে, মাত্রই ১৭-১৮ বছরের একটি ঢিলেঢালা একাডেমিক জার্নি শেষ হল, যেখানেপ্রচুর বিশ্রাম ও রিল্যাক্সের সাথেই চলা গেছে। এখন জীবনের একটি প্রাইমটাইম টু সারভাইভ, রাইজ এ্যন্ড সেটল। এই সময়ে কাজ, পেশা, ক্যারিয়ার ওগ্রোথকে টপ প্রায়োরিটি না দিয়ে বিশ্রাম, রিল্যাক্স ও এন্টারটেইনমেন্ট ইনলাইফকেই যদি লাইফ হিসেবে ধরে নিয়ে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সকে জীবনেরপ্রধান লক্ষ্য ও ব্রত বানিয়ে চাকরি/ব্যবসায় আসার প্রবণতা তৈরী হয়, তাহলেতারা কীভাবে বড় হবেন?

এমনিতেই ক্যারিয়ারিজম ও হায়ার ট্যালেন্ট এ্যন্ড ইনোভেশন ইনডেক্স নিয়েআমাদের অবস্থান নড়বড়ে। তার ওপরে বিগত বছরগুলোতে আমাদেরসামাজিক উৎকর্ষের ব্যাপক অবনমন হয়েছে বলেই মনে করা হয়। সেখানেলাইফ ব্যালেন্স নিয়ে এত দৌড়ঝাঁপ বেমানান।

আমাদের সমাজে, এমনকি, ব্যালেন্সের নামে কখনো কখনো ওইএনজয়মেন্ট পার্টে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। কাজ, পেশা ও চাকরির উৎকর্ষ ওভ্যালূ এ্যডিশনের চেয়ে এনজয়মেন্ট কতটা পাচ্ছি-সেটাই হয়ে উঠছে বেশিআলোচ্য। সেই বিবেচনায় জবে ফ্রাস্ট্রেশন আসছে, জব ছাড়ার ঘটনা বেশিঘটছে। আমরা আমাদের প্রায়োরিটি সেটিংয়ে গন্ডগোল করে ফেলছি।

বাংলাদেশ যে সত্যি সত্যিই একটি উচ্চবিত্ত ধনী দেশ-সেটি বুঝতে ও বিশ্বাসকরতে হলে মিরপুর পিরিত সড়কে চলে আসুন, বিকেল ৬ টার পরে।

এখানে আনুমানিক পঞ্চম শ্রেনী হতে ২৩/২৪ হয়ে ৩০/৩৫ বছর বয়সেরছেলে ও মেয়েরা জোড়ায় জোড়ায়, জড়াজড়ি করে, কোলাকুলি করে এমনবিন্দাস হয়ে বসে, দাড়িয়ে, কেলিয়ে, চেগিয়ে চাড্ডা (চা+আড্ডা) দিচ্ছে, রোমান্স বিনিময় করছে;

বাইকের ব্যাক-টেইলে যুবতীকে আসীন করে তার পায়ের কাছে বসে উঠতিপ্রেমপ্রার্থী যুবক যেভাবে আফ্রোদিতির আসনে পুঁজো দিচ্ছে আর তাকেআফ্রোদিতির ফিল দিচ্ছে, স্কুল যাবার কিংবা কামাই রোজগারের জন্যজীবনকে প্রস্তুত করবার প্রাইম টাইমে যেভাবে রাজা-বাদশার মতো চিল করেসময় কাটাচ্ছে;

তাতে মনেই হয় না, জীবনে চাকরি-বাকরি, আয়-রোজগার করবার কোনোব্যাপার আদৌ আছে।

যেন সব কানাডার নাগরিক। কীসের পড়াশোনা, কীসের রেজাল্ট, কী সবচাকরি-বাকরির চেষ্টা, কীসের যোগ্যতা হাসিলের জন্য কষ্ট করা।

যাস্ট চিল চিল!

এত বিন্দাস, চিন্তাহীন, অলস, বেভুল, মাস্তিময় থাকার মতো সাহস, শক্তি, সুযোগ এরা কীভাবে পাচ্ছে? টাকা কি সত্যিই আজকাল বারান্দার গাছেধরছে?

এত কিছু ’এনজয়’ করে কোনোমতে হেঁচড়ে পেঁচড়ে যারা একাডেমি শেষকরছেন, তাদের আবার থলেতে থাকা পাথেয় খুবই নগন্য। তারও পরে যদিতারা কানাডা, সিঙ্গাপুরের তরুণদের মতো চমৎকার চমৎকার ওয়ার্ক-লাইফব্যালেন্স নামের ততোধিক রিল্যাক্স আবারও চান, তাহলে সিরিয়াস ওইন্ডাস্ট্রিয়াস তারা কবে হবেন?

ভুল ভাববেন না। আমি ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের বিপক্ষে নই। একজনউৎকর্ষপূর্ণ ও সৃষ্টিশীল কর্মী পেতে তার ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স নিশ্চিত করাজরুরী। কারন, দিন শেষে মানুষ জীবন ও পরিবারের জন্য জব করে থাকে।তবে, আমি যেটাকে নিয়ে বিরক্ত, সেটা হল, লাইফ ব্যালেন্স নিয়ে অতিরিক্তবাড়াবাড়ি। কার্যত লাইফের চেয়ে কোয়ালিটি অব লাইফ অথবা স্ট্যান্ডার্ডঅব লাইফ, এমনকি স্ট্যাটাস অব লাইফকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাইফব্যালেন্সের নামে চালানো হচ্ছে। অর্থবহ জীবনের চেয়ে এখন ঝকমকিজীবন, স্ট্যাটাস সিম্বলময় জীবন, এনজয়মেন্ট ভরা জীবনকে ব্যালেন্সডলাইফের প্রতিভূ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে-মূলত সেটা নিয়েই আমারআপত্তি। কাজে সময় দিলাম কিনা, কাজটাকে ভালোবাসলাম কিনা, ক্যারিয়ার গ্রোথে সার্বিকভাবে মনোযোগ, সময়, চেষ্টা দিলাম কিনা-তার খবরনা রেখে কেবল জীবনকে এনজয় করতে পারছি কিনা-সেটাই একমাত্র মূখ্যহয়ে উঠলে সেটা অধঃপতনই ডাকবে। তখন ওয়ার্কও থাকবে না, লাইফওনা। কারন, জীবন সাজাতে টাকা লাগবে।

আমি আরেকটু আগ বাড়িয়ে একটা কু-কথা বলি।

আপনাকে আসলে ব্যালেন্স না, যে কোনো একটাকে বেছে নিতে হবে। লাইফঅথবা ক্যারিয়ার। ব্যালেন্সড লাইফ ও ক্যারিয়ার আসলে কখনো কখনোআমার মনে হয় একটা মিথ মাত্র। ক্যারিয়ার চাইলে লাইফে স্যাকরিফাইসকরতেই হবে। ক্যারিয়ারকে সময় দিতে হবে। ক্যারিয়ারের জন্য সময়, এফোর্ট, টাকা ও কনসেনট্রেশন ইনভেস্ট করতেই হবে। সেটা করতে হলে যখন যেটাকরতে হবে-সেটা দিতে গেলে লাইফের অংশে টান ধরবেই।

আমি যখনই কোনো জবের ভাইবা নিই, ক্যানডিডেটদের একটা প্রশ্ন করি।সেটা হল, আপনাকে যদি কখনো এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, যখনআপনাকে পরিবার ও ক্যারিয়ার হতে যে কোনো একটা বেছে নিতে হবেই, তখন কোনটা নেবেন। প্রায় সিংহভাগই বলেন পরিবার। হা হা হা।

আমি কখনো কখনো মানুষকে বলি, ৪০ বছর বয়স হবার আগে বিয়ে-শাদিকরে পরিবার না বানাতে। ততদিন ক্যারিয়ার সাজাতে বলি। কারন, আসলেই ২৫ এ ক্যারিয়ার শুরু করে পরের বছর দশেক ক্যারিয়ারের পেছনেইনটেনসিভলি কাজ করতে হয়। এই দশ বছর ক্যারিয়ার সেটল, গ্রোথ ওসাসটেইনেবল করতে লারনিং, এক্সপিরিয়েন্স, নেটওয়ার্কিং, স্কীল, এক্সপোজার-অর্জন করতে হয় প্রচুর। প্রচুর সময়, টাকা, এফোর্ট, কনসেনট্রেশন খরচ করতে হয়। নিবিড়ভাবে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়।সবরকম চাপ ও বাঁধন হতে মুক্ত থেকে সেটা করতে পারলে বেস্ট। পরিবারথাকলে আপনি সেটা কখনোই ১০০ ভাগ দিতে পারবেন না। কমপ্রোমাইজহবেই।

মানে, বলতে চাইছি, ক্যারিয়ার গ্রোথের গ্রামার ডিজার্ভ করে যে এই আরলিবছরগুলো আপনি এবসলুটলি ক্যারিয়ারকে নিয়েই থাকুন, এই সময়টা আরকিছুতে ফোকাস না করুন। ক্যারিয়ারকে পুরোটা দিলে ক্যারিয়ার সেভাবেইগ্রো করে। সেখান হতে যতটা আপনি লাইফের জন্য শেয়ার করবেন, স্যাকরিফাইস করবেন, যতটা কম করবেন-গুনে গুনে ক্যারিয়ার ঠিক ততটাইইমপ্যাক্ট হবে। ট্রেড অফ। মনে রাখবেন, আমি আপনাকে বিয়ে-শাদি করতে, পরিবার গড়তে না করছি না। আমি আপনাকে অংকটা দেখাচ্ছি। চয়েজআপনার। এ্যবসলুটলি ক্যারিয়ার গড়বেন, নাকি ব্যালেন্স করবেন, করলেকতটা ব্যালেন্স করবেন-তা আপনার বিষয়। তবে মনে রাখবেন, আমিবলেছি, এই বয়সটা ক্যারিয়ার গড়বার। ক্যারিয়ার চাইলে সেটাকে প্রায়োরিটিদিন। আর যদি আপনি ব্যালেন্স করতে চান, তাহলে সেটার মধ্য দিয়ে যাআসে-সেটা মেনে নিতে হবে। সেই প্ল্যানটা একদম আলাদা আলাপ।অন্যত্র করেছি। পড়ে নেবেন।

আমি বলছি না, যে, জীবন হতে বিশ্রাম, এনজয়মেন্ট, ফান, কোয়ালিটিটাইম, ফ্যামেলি টাইম একদম ভুলে গিয়ে অষ্ট্রপ্রহর কাজ কাজ কাজ করে মরেযেতে। আমি বলছি না, পরিবারকে ত্যাগ করতে। আমি বলছি, প্রায়োরিটিসেটিং নিয়ে।

২৫ বছর বয়সেই একজন তরতাজা তরুণ, যিনি মাত্রই ক্যারিয়ার শুরুকরলেন, তিনি যদি জীবনের ১৭ টি বছর রিল্যাক্স করে কর্পোরেটে, ক্যারিয়ারে ঢুকেই তখনই চরম আয়েশ ও রিল্যাক্স নিয়ে অতি ব্যস্ত হতে চান, তাহলে তিনি পরের জীবনের জন্য প্রস্তুত হবেন কী করে, নিজের গ্রোথেরজন্য সময়, টাকা ও এফোর্ট দেবেন কী করে? নিজের আপস্কিলিং ও রিস্কিলিংকরবেন কী করে? ক্যারিয়ারের ভিত্তি যখন নির্মীত হয়, তখনইতো তাকেসবচেয়ে বেশি সময় দিতে হবে ক্যারিয়ারের পেছনে।

ক্যারিয়ারকে সময় দেয়া বলতে বদমাশ বসরা আবার যেন ধরে না নেন, আমি রাত ১০ টা তক অফিস করাকে হালাল করতে বলছি। আমি টোটালক্যারিয়ার প্ল্যান ও সেটাতে গ্রোথের জন্য সময়, টাকা, মনোযোগ ও এফোর্টদেয়াকে ইঙ্গিত করছি।

শুধু চিল ও কুল করে তো জীবনের ১৭ বছর গেলই। আজকাল একাডেমিরজীবনটা হতে তো খুব সামান্যই পাথেয় সংগ্রহ করা যাচ্ছে। যারা চাকরিরবাজারে আসছেন, তাদের তো আমরা দেখছি। বিপুল গ্যাপ চাওয়া ওপাওয়ায়। তাহলে, এখনও যদি সেই চিল করে চাকরি করে যাবার চিন্তা থাকে, তাহলে “বড় তো হচ্ছেন, কিন্তু, বেড়ে উঠবেন কবে?

লেখক: HR.A.C Professional  Adviser  Headhunter  Writer Counselor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!