fbpx

মোঃ নুর-ই-আলম

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের মৌলিক কর্তব্য হল ওই প্রতিষ্ঠানের নীতিগত দিকগুলোকে নিশ্চিত করা। একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপগুলি যাতে একটি নির্দিষ্ট ও সুনিয়ন্ত্রিত আইনী কাঠামোর মধ্যে চলে তা নিশ্চিত করতে হয়। এই কাজটি সম্পাদন করার জন্য একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের অবশ্যই কিছু দক্ষতা থাকতে হবে।

নীচে কয়েকটি গুরুর্ত্বপূর্ণ দক্ষতা উল্লেখ করা হল। এই দক্ষতা যার মধ্যে থাকবে তিনি একজন ভালো কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক হতে পারবেন বলে আশা করা যায়:

১. ঝুঁকি মূল্যায়ণ

ঝুঁকি মূল্যায়ন কমপ্লায়েন্স কার্যাবলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেহেতু ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ঝুঁকির স্কোর বা স্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয় হিসেবে ধরা হয়, সেহেতু একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে উক্ত প্রতিষ্ঠানের যে সকল ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকতে পারে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হয় এবং সে মোতাবেক ঝুঁকি মূল্যায়ন করে স্কোর করতে হয়। এ হিসেবে একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে অবশ্যই ঝুঁকি নির্ধারণ, ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঝুঁকি অনুযায়ী সমাধান প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়ের উপর বিশদ জ্ঞান থাকা অত্যান্ত জরুরী।

২. দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা/শিল্প বিরোধ নিরসন

একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য কাজ করতে হয়। তাই অবশ্যই এই দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনার উপর বিশদ ও বিস্তর দক্ষতা থাকতে হবে। যেমন-প্রতিষ্ঠানের যে কোন সময় চাকুরীর শর্তাবলী সংক্রান্ত শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষের মধ্যে যে কোন দ্বন্দের সৃষ্টি হতে পারে। ঠিক তখনই দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রয়োজন হয়। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে অবশ্যই সুকৌশলী হতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে জয়ী-জয়ী অবস্থান সৃষ্টি করতে হয়। যে কোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে তৈরী পোশাক শিল্পে দ্বন্দ্ব নিরসন বা অবসান কাজটি অত্যন্ত জটিল। কেননা এখানে ত্রিপাক্ষিক বিষয় অর্ন্তভুক্ত থাকে। তৈরী পোশাক শিল্পে যে কোন দ্বন্দের উদ্ভব হলে বা কোন বিষয় নিয়ে মতভেদ সৃষ্টি হলে সেখানে দেখায় যায় অনেক সময় বাহিরের কিছু শ্রমিক সংগঠন বিষয়টিতে প্রভাব ফেলে তেমনি সরকারের একটি চাপ থাকে। শ্রমিক সংগঠন, মালিক সংগঠন ও সরকারের মধ্যস্থতায় দ্বন্দের বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের ভ’মিকা অপরিসীম।

৩. নতুন প্রণয়নকৃত এবং সময়ে সময়ে সংশোধিত আইন/বিধিমালার উপর সার্বক্ষনিক নজর রাখতে হয়

যেহেতু কমপ্লায়েন্স এর শর্তাবলীগুলো প্রতিনিয়তই পরিবর্তনশীল ও সময়ের সাথে সাথে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে শর্তাবলীগুলো হালনাগাদ করতে হয়। সেহেতু আজকে যে আইন/বিধিমালাটি যে কোন কারখানা/শিল্প সেক্টরের জন্য কার্য্যকর সেটি আগামী দিনে কার্য্যকর নাও থাকতে পারে। তাই এই সেক্টরে কর্মরত একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে সরকারের পরিবর্তিত আইন/বিধিমালা/বায়ার কোড অফ কন্ডাক্ট/গাইডলাইন ফর প্রডিউসার (বায়ার কর্তৃক প্রদত্ত)/অডিট শর্তাবলী/আর্ন্তজাতিক কনভেশন ইত্যাদির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় ও সার্বক্ষনিক নিজেকে আপডেট রাখতে হয়। যখনই কোন আইন/বিধিমালা পরিবর্তিত হয় বা আপডেট হয় তখন সাথে সাথে কারখানার নীতিমালাগুলো আইন/বিধিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন করে হালনাগাদ করে নিতে হয়। অন্যথায় বায়ার/কমপ্লায়েন্স/টেকনিক্যাল অডিট ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হতে পারে।

৪. কম্পিউটার আইটি সংক্রান্ত জ্ঞান

বর্তমান ডিজিটাল বিশে^ কম্পিউটার ও আইটি সংক্রান্ত যার জ্ঞান বেশি তিনি করপোরেট জগতে তত বেশি অগ্রাধীকার পেয়ে থাকেন। আর যে কোন শিল্প/কারখানা ব্যবস্থাপনায় এই তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। বিশেষ করে বর্তমান কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট এই তথ্য প্রযুক্তির ভ’মিকা অপরিসীম। যেমন-বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক বায়ার দেরই অনলাইন পোর্টাল বা সাপ্লায়ার পোর্টাল থাকে। এই পোর্টাল এ ঐ বায়ারদের সাথে সংযুক্ত উৎপাদনকারীদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য অনলাইন প্লাটফরম বা সাপ্লায়ার পোর্টাল এ হালনাগাদ করতে হয়। বিশেষ করে মার্চেন্ডাইজিং বিভাগের সাথে সকল যোগাযোগ এই সাপ্লায়ার পোর্টাল এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এই পোর্টালগুলোতে কোন একটি উৎপাদনকারকের হালনাগাদ তথ্যসমূহ যেমন-ফ্যাক্টরী প্রোফাইল, আপডেট সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ইত্যাদি নিয়মিত আপলোড করতে হয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এই আপলোড এর কাজটি একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে করতে হয়। সুতরায় কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের যদি তথ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কোন জ্ঞান না থাকে তবে তিনি নানাবিধ সমস্যায় পতিত হবেন। তাছাড়া অনেক কমপ্লায়েন্স বা সার্টিফিকেশন অডিট এর জন্য অনলাইন প্লাটফরম ব্যবহার করতে হয়। যেমন-বিএসসিআই, র‌্যাপ, সেডেক্স, হিগ ইনডেক্স ইত্যাদি অডিট এর জন্য অনলাইন প্লাটফরমে রেজিস্ট্রেশন করা অত্যাবশ্যক। এই প্লাটফরমগুলোতে অডিট হয়ে যাওয়ার পূর্বে ও পরে বিভিন্ন কাজ থাকে যেমন-অডিট এর পূর্বে অডিট এর জন্য অনুরোধ করতে হয়, অডিট ফি জমা দিতে হয়, অডিট ইনভয়েস সংগ্রহ করতে হয়, অডিট হয়ে যাওয়ার পর আপডেট অডিট রিপোর্ট আপলোড করতে হয়। এই কাজটিও কিন্তু একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককেই সম্পন্ন করতে হয়। তাই বর্তমান বিশ্বে একজন ভালো কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে কম্পিউটার ব্যবহার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পরিমিত জ্ঞান থাকা জরুরী। তাছাড়া মেইল কমিউনিকেশন এ একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে পারদর্শী হতে হয়।  

৫. সফলভাবে বাহ্যিক আভ্যন্তরীন অডিট পরিচালনা করা;

যে কোন প্রতিষ্ঠানে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন অডিট সফলভাবে সম্পন্ন করতে একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন অডিট এর সময় ওপেনিং মিটিং থেকে শুরু করে ক্লোজিং মিটিং পর্যন্ত একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে খুবই প্ল্যান ও কৌশল করে আগাতে হয়, প্রয়োজনীয় দায়িত্ব বন্টন করতে হয়। অডিট এ যে কোন রেকর্ড/ডুকুমেন্টস প্রদান করার সময় কৌশুলী হতে হয়। অডিটরদের সাথে নিবিড় সর্ম্পক স্থাপন করতে হয় যাতে অডিট এ বেশি নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যু না আসে। সাধারণতঃ অডিটরগণ কোন কোন বিষয়ে ছাড় দিতে চান না। যে বিষয়গুলো ক্রিটিক্যাল বা মারাত্মক সেগুলো যদি সম্ভব হয় অডিট উপস্থিত থাকাকালীণ যতদ্রুত সম্ভব সমাধান করে ফেলতে হয়। যে ক্ষেত্রে কোন ইস্যু নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা যায় সে বিষয়ে অডিটরকে যুক্তিতর্ক দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফলাফল নিয়ে আসাও একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

৬. টেকনিক্যাল/কোয়ালিটি অডিট সর্ম্পকে জ্ঞান রাখা

বর্তমানে কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিট। অনেক বায়াররা তাদের অডিট প্রটোকল এ এই টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিটকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অনেক বায়ার তাদের প্রি-প্রডাকশন এ্যাসেসমেন্ট এ যদি কোন সাপ্লায়ার এই টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিট অংশে স্টান্ডার্ড মান বা কাঙ্খিত মান অর্জন করতে না পারে তবে বায়ার সেই সাপ্লায়ার এর সাথে উৎপাদন সর্ম্পকে যেতে চায় না। তাই একটি বায়ারকে ফ্যাক্টরীর দিকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিট এর গুরুত্ব অপরিসীম। এক্ষেত্রে অনেক কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে উদাসীন থাকতে দেখা যায়। কিন্তু কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে সোস্যাল ও ইনভাইরোমেন্টাল অডিট এর পাশাপাশি অবশ্যই টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিট এর শর্তাবলী সর্ম্পকে প্রয়োজনীয় ও বিশদ জ্ঞান থাকাটার বিশেষ জরুরী। তাছাড়া এই টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিট এর উপর জ্ঞান থাকলে কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক তার টেকনিক্যাল/প্রোডাকশন/কোয়ালিটি টিমকে আগে থেকে বিষয়গুলোতে সতর্ক করে দিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে পারেন। এইভাবে প্রো-এ্যাকটিভলি একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক টেকনিক্যাল বা কোয়ালিটি অডিট এ সাফল্য নিয়ে এসে দিতে পারেন।

৭. অডিট চলাকালীন তাৎক্ষনিক কোন ডুকুমেন্টস বা রেকর্ডস তৈরী করার সক্ষমতা

বায়ার বা কমপ্লায়েন্স অডিট এ অনেক সময় অডিট বা বায়ার চাহিদা মোতাবেক অনেক ডুকুমেন্টস বা রেকর্ডস প্রস্তুত থাকে না। যে কারণে অডিট এ গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বা নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যু এসে থাকে। এই নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যু এড়ানোর জন্য একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের তাৎক্ষনিক অডিট বা বায়ার এর চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় রেকর্ড বা ডুকুমেন্টস বা পলিসি তৈরীর সক্ষমতা থাকা বিশেষ জরুরী।

৮. কোন অডিটে কোন ধরনের ডুকুমেন্টস প্রদান করলে রেফারেন্স কোন ডুকুমেন্টস বা রেকর্ডস অডিটর চাইতে পারে তা ধারণা রাখা

বায়ার বা কমপ্লায়েন্স অডিট এ যে কোন ডুকুমেন্টস প্রদান করার আগে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, এই ডুকুমেন্টস এর সাথে আর কি কি সাপোর্টিভ ডুকুমেন্টস সাথে রাখতে হবে যা অডিটর এভিডেন্স হিসাবে চাইতে পারে। তাই প্রতিটি ডুকুমেন্টস বা রেকর্ডস অডিটরকে সাবমিট করার পূর্ব থেকেই পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন  সাপোর্টিভ ডুকুমেন্টস প্রমাণ হিসাবে প্রস্তুত রাখতে হয়। এই পূর্ব পরিকল্পিত কাজটিই একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক করে থাকেন।

৯. বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট সর্ম্পকে আপডেট থাকা জ্ঞান রাখা

অনেক সময় দেখা যায় যে, কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের নিজ ফ্যাক্টরীরর বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট সর্ম্পকে ধারণা পর্যাপ্ত থাকে না। ফলে অডিট এ অডিটর এর চাহিদা মোতাবেক অনেক ডুকুমেন্টস প্রদান করতে পারেন না। সেজন্য ভালো একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক কে তার নিজ ফ্যাক্টরীরর বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট সর্ম্পকে পর্যাপ্ত ধারণা রাখতে হবে।

১০. বায়ারদের কোয়ালিটি ম্যানুয়াল সর্ম্পকে ধারনা রাখা

অনেক সময় দেখা যায় যে, কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের বায়ারদের কোয়ালিটি ম্যানুয়াল সর্ম্পকে ধারণা পর্যাপ্ত থাকে না। ফলে অডিট এ অডিটর এর চাহিদা মোতাবেক অনেক ডুকুমেন্টস প্রদান করতে পারেন না। সেজন্য ভালো একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক কে তার নিজ ফ্যাক্টরীরর বায়ারদের কোয়ালিটি ম্যানুয়াল সর্ম্পকে পর্যাপ্ত ধারণা রাখতে হবে।

১১. বায়ারদের সোস্যাল, ইনভায়রনমেন্টাল কেমিকেল ব্যবহার ম্যানুয়াল সর্ম্পকে বিশদ ধারনা রাখা

অনেক সময় দেখা যায় যে, কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের বায়ারদের সোস্যাল, ইনভায়রনমেন্টাল ও কেমিকেল ব্যবহার ম্যানুয়াল সর্ম্পকে বিশদ ধারনা থাকে না। ফলে অডিট এ অডিটর এর চাহিদা মোতাবেক অনেক ডুকুমেন্টস প্রদান করতে পারেন না। সেজন্য দক্ষ একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক কে তার নিজ ফ্যাক্টরীরর বায়ারদের সোস্যাল, ইনভায়রনমেন্টাল ও কেমিকেল ব্যবহার ম্যানুয়াল সর্ম্পকে পর্যাপ্ত ধারনা রাখতে হবে।

১২. সকল স্ট্যান্ডার্ড যেমন-আইএসও, বিএসসিআই, র‌্যাপ, সি-টিপ্যাট, ইটিআই বেসকোড ইত্যাদি সর্ম্পকে বিশদ ধারনা রাখা

একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক কে সকল স্ট্যান্ডার্ড যেমন-আইএসও, বিএসসিআই, র‌্যাপ, সি-টিপ্যাট, ইটিআই বেসকোড ইত্যাদি সর্ম্পকে বিশদ ধারনা রাখতে হয়। কেননা এই সকল অডিট তাদের কোড অফ কন্ডাক্ট বা নীতিমালা ও ম্যানুয়াল এর ভিত্তিতেই করা হয়ে থাকে। তাই নির্দিষ্ট অডিট এর নির্দিষ্ট চেকলিস্ট অনুযায়ী সকল প্রয়োজনীয় ডুকুমেন্টস/পলিসি/রেকর্ড তৈরী করা কমপ্লায়েন্স টিম এর দায়িত্ব।

১৩. বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরী করা

প্রায় প্রত্যেক বায়ারেরই চাহিদা থাকে যে উৎপাদনকারী তাদের কর্মীদেরকে বায়ারের কোড অফ কন্ডাক্ট এর উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। তাই একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্টানের মাসিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী তৈরী করার সময় বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট গুলো মাথায় রাখতে হয় এবং সে অনুযায়ী কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল/ম্যানুয়াল তৈরী করতে হয়। একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক এই কাজটি বেশ দক্ষতার সাথেই পালন করে থাকেন। 

১৪. বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নীতিমালা/প্রসিডিউর তৈরী করা

প্রায় প্রত্যেক বায়ারেরই চাহিদা থাকে যে উৎপাদনকারী তাদের নীতিমালা বা প্রসিডিউর তৈরীর ক্ষেত্রে বায়ারের কোড অফ কন্ডাক্ট গুলো যাতে প্রতিফলন ঘটে। যদি কোন নীতিমালা তাদের কোড অফ কন্ডাক্ট গুলো কভার না করে সেক্ষেত্রে তারা নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যু দিতে পারেন। তাই একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে কোম্পানীর নীতিমালা ও প্রসিডিউর তৈরীর সময় বায়ারদের কোড অফ কন্ডাক্ট গুলো মাথায় রেখে তৈরী করেন।

১৫. মেইল করেসপনডেন্স দক্ষতা অর্জন

বায়াররা যখন কোন একটি ফ্যাক্টরীতে কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক এর সাথে যোগাযোগ করেন তখন অবশ্যই তারা মেইল করেসপনডেন্স কে যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই মেইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে দক্ষ না হওয়ার কোন বিকল্প নাই। কেননা বায়াররা বিদেশে থেকে মেইল এ যোগাযোগ করে থাকে এবং তারা সময়মত মেইল এর উত্তর আশা করেন। যে কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক এর এই মেইল যোগাযোগ দক্ষতা যত বেশি সেই কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক  তত বেশি দায়িত্বশীল ও দক্ষ হিসাবে পরিগণিত হয়।  

১৬. ক্যাপ তৈরীতে কৌশুলী হওয়া

একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপকের যে কোন অডিট এর ক্যাপ তৈরীতে অত্যন্ত কৌশুলী হওয়ার অত্যন্ত জরুরী। কেননা অডিট এর ফাইন্ডিং অনুযায়ী যখন কারেকটিভ এ্যাকশন তৈরী করা হয় তখন এমনভাবে করতে হয় যাতে ঐ ক্যাপটি আরেকটি নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যুর জন্ম না দেয়। ক্যাপ রিপোর্ট এ ছবি সংযুক্ত করার সময় কৌশল অবলম্বন করতে হয়। টাইমফ্রেম দেওয়ার সময় কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

১৭. শ্রমিকদের ভেতরের খবর রাখা

একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে তার কারখানার শ্রমিকদের উপর সার্বক্ষনিক নজর রাখতে হয়। শ্রমিকদের সাথে এমনভাবে মিশে যেতে হয় যেন তারা কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে আপন মনে করে যে কোন সময় যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর খবর দিতে পারে। একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক তার ফ্যাক্টরীতে গোপন গোয়েন্দা বাহিনী তৈরী করেন সকল বিষয়ে সার্বক্ষনিক নজরদারি করার জন্য।

১৮. বাহিরের সংগঠনের উপর নজর রাখা

বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করার চক্রান্তে বাহিরের কতিপয় কিছু শ্রমিক সংগঠন/ফেডারেশন অপকর্মে লিপ্ত থাকে। এই সংগঠনগুলোর উপর সার্বক্ষনিক নজর রাখতে হয়। ঐ সংগঠনেও যেমন নিজস্ব স্পাই নিয়োগ করা প্রয়োজন তেমনি কোম্পানীর আভ্যন্তরীন কোন কর্মীরা সংগঠনের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে কিনা সে সর্ম্পকে বিশেষ নজরদারি রাখতে হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকেন একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক।

১৯. বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক/দেশিয় প্রশিক্ষণ সেমিনার ওয়ার্কশপে নিয়মিত অংশগ্রহন করা

কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট এ দক্ষ হওয়ার জন্য বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক/দেশিয় প্রশিক্ষণ ও সেমিনার ও ওয়ার্কশপে নিয়মিত অংশগ্রহন করার কোন বিকল্প নেই। তাই একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপককে নিজস্ব অর্থায়নেই হোক বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয়েই হোক বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা বা দক্ষতা অর্জন করতে হয়।

২০. সামাজিক নেটওয়ার্ক বাড়ানো

কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট এ দক্ষ হওয়ার জন্য সামাজিক নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। কেননা সামাজিক নেটওয়ার্কিং বাড়ানোর মাধ্যমে একজন কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে যে কোন সময় তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিজ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান বা উদ্ভুত কোন সমস্যা মোকাবেলা করতে পারেন। তাই যত বেশি সম্ভব এই সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সামাজিক নেটওয়ার্কিং এমনভাবে করতে হবে যাতে করে শিল্প সেক্টরে কোথাও কোন বিরোধ বা দুর্ঘটনা হলে যাতে নিজের কাছেও সংবাদ আসে। একজন দক্ষ কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক এর বিস্তৃত সামাজিক নেটওয়ার্কিং থাকা অত্যন্ত জরুরী।

লেখকঃ হেড অব এইচ.আর, এ্যাডমিন এন্ড কমপ্লায়েন্স, এসএম গ্রুপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!