fbpx

Md. Walidur Rahman Biddut

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

‘চাকরির বাজার খারাপ’-এরকম একটি কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। যদিও কথাটি আমি বিগত ১৮ বছর ধরেই, যখন হতে আমি নিজেই চাকরির বাজারের উমেদার হয়েছি, তখন হতেই শুনে আসছি।

একটা বড় সংখ্যক মানুষ মনে করেন, আসলে, চাকরির বাজার কখনোই ভাল ছিল না। মজার বিষয় হল, র্যান্ডম আলোচনায় আমি প্রায় কখনোই এবং কারো কাছেই শুনিনি, যে, চাকরির বাজার ভাল যাচ্ছে। ঠিক যেরকম, আজ হতে ৩০ বছর আগেও আমার বাবা যখন বাজারে যেতেন, তখনো রোজ এসে বলতেন, বাজারে আগুন, কিছুতে হাত দেয়া যায় না। আজ ৩০ বছর পরে, তার সন্তানও একই কথা বলছে-বাজার গরম। ব্যবসায়ীরা যেমন কখনোই বলেন না, যে, ব্যবসা ভাল যাচ্ছে।

চাকরির বাজার কি আসলেই কখনো ভাল ছিল? বা, চাকরির বাজার কি আসলেই ইদানিং খারাপ যাচ্ছে?

এই ধরুন, ২০২৪ সাল। এখন কি চাকরির বাজার খারাপ? কী মনে হয় আপনার? বা, ধরুন, ২০২০ সালে যখন কোভিড হানা দেয়, তখন হতে ২০২৩ সাল-তিন বছর। এই সময়টা অনেকেই অহরহ বলতেন, চাকরির বাজার খুব খারাপ, খুব টাফ, খুব কমপিটিটিভ। কতটা সত্য আর কতটা কাল্পনিক বিষয়টা?

হ্যা, কোভিডের ৩ বছর প্রচুর জব কাট ও পে কাটের খবর আমার কানে এসেছে-সত্যি। নতুন জব সৃষ্টি হয়নি-তা ও অনেকটা সত্যি। তবে বাদবাকি বছরগুলো, বা, অন্তত আমাদের স্মরনের মধ্যে থাকা সময়টা? বাজার কি সত্যিই শুকনো ছিল?

অধিকাংশ মানুষ অবশ্য ‘বাজার খারাপ’ ন্যারেটিভকে সমর্থন করেন। কিন্তু, খুব ছোট একটা দল মনে করেন, যে, বাজার খারাপ বলে কিছু নেই। বাজার আজীবনই আসলে কমপিটিটিভ ছিল। সেই কমপিটিশন দিনকে দিন আরো টাফ হয়েছে।

এখন হতে ৪ দশক আগে যদি অবস্থাটা থেকে থাকে সারভাইভাল ফর অল, দুই যুগ আগে ২০০০ সালে বাজার যদি থাকে সারভাইভাল ফর দি ফিট, সেটা এখন দাড়িয়েছে সারভাইভাল ফর দি ফিটেস্ট, টাফেস্ট, বেস্ট। এখন সে-ই সারভাইভ করবে, সুযোগ করে নেবে, যে যুগের চাহিদার সাথে একদম হাড্ডাহাড্ডিভাবে ফিট।

খেয়াল করে দেখুন তো, প্রতিদিন লিংকডইনে আপনি মোট কতগুলো নতুন জবে জয়েন করবার মিষ্টি পোস্ট দেখতে পান? চোখ বন্ধ করে একটু গুনে নিন তো। আমি তো অন্তত ডজনখানেক দেখিই।

প্রশ্ন হল, এত খারাপ অবস্থার মধ্যে এঁরা কীভাবে নিজেদের প্রোভাইড করছেন?

অবস্থা ভাল না খারাপ-সেই জরিপ করা টাফ। যদিও বেশ কিছু জরিপ বলছে, দেশে ৪.৮ কোটি বেকার, ২৬ লাখ গ্রাজুয়েট বেকার, ২ কোটি বেকার, শিক্ষিতরা গণহারে বেকার ইত্যাদি। আরেকটা প্রনিধানযোগ্য আশঙ্কা হল, খুব আনইউজুয়ালি এবং আনকনভেনশনালি, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিপরীতে আমাদের এমপ্লয়মেন্ট বাড়ছে না। যেটা খুবই অস্বাভাবিক। এই সত্যটা মাথায় রেখে আলোচনা চলুক। বুঝতে সুবিধা হবে।

কিন্তু, তার মধ্যেও, আমি বলব, আপনার যদি সত্যিকারের ড্রিম ও ডেসপারেশন থাকে, চেষ্টা ও পারসিভারেন্স থাকে, তুমুল প্রস্তুতি থাকে, আপনি যদি নিজেকে জিনিয়াস হিসেবে প্রস্তুত করে নেন, আপনার জন্য বাজার আজীবনই দারুন। কারন, আপনার বাজার শুধু দেশে না, বিদেশেও আছে।

যাহোক, আজকের আলাপ চাকরির বাজার নিয়ে না। আলাপ করতে যাচ্ছি ট্যালেন্ট মার্কেট আর জব মার্কেটের ব্যাপারীদের নিয়ে। মানে, হেড হান্টার ও হেড হান্টিংয়ের কিছু মৌলিক দিক নিয়ে। সেই সাথে হেড হান্টিংয়ের কিছু টেকনিক, নানা অসঙ্গতির দিক আর হেড হান্টারদের ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে।

না, হেড হান্টার বলতে ছেলেধরা ধরে নেবেন না। জোকটা জানেন নিশ্চয়ই, “পদ্মা সেতুর কনসট্রাকশনের কাজে গতি আনতে আরও হেডস দরকার।”-চায়নিজ এঞ্জিনিয়ারের এমন কথাই নাকি বিকৃত হয়ে কালক্রমে বাজারে ভাইরাল হয়, যে, পদ্মা সেতুতে মানুষ বলি দিয়ে মাথা দিতে হবে। আর তার পরই নাকি দেশে ছেলেধরার উৎপাত বাড়ে। বাড্ডায় উন্মত্ত ও নির্বোধ আমজনতার একজন অপ্রকৃতস্থ নারী (সম্ভবত সুলতানা বা জেসমিন নাম)কে পিটিয়ে মেরে ফেলবার ঘটনা মনে পড়ে?

যাহোক, হেড হান্টাররা তীর-ধনুক নিয়ে শিকার না করলেও, তারা নানা অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই মানুষ শিকার করেন। নিজের বা অন্যের প্রতিষ্ঠানের জন্য যারা উপযুক্ত চাকরি প্রত্যাশী তথা ক্যানডিডেট ও তাদের প্রোফাইল সোর্স করেন, তারাই হেড হান্টার। এই কাজটি স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের এইচ.আর বিভাগের লোকেরা করলেও এখন এই কাজের জন্য তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে ফ্রিল্যান্স ব্যক্তিরাও হেড হান্টার হিসেবে কাজ করেন। তারা অন পেমেন্ট অথবা অনেক সময় বিনা পেমেন্টেই বিভিন্ন পজিশনে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য হেড হান্টিং করে দেন। আমি নিজেও করি। ফ্রি।

যদিও চাকরির বাজারের সোর্সিং ও জব লিংকিংয়ের স্কোপটি পুরোপুরি থার্ড পার্টির কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে কিনা, বিভিন্ন ফোরাম ও কোরামের সিন্ডিকেটে আটকে যাচ্ছে কিনা-আজকাল তা নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। এই সেবার ভাল ও খারাপ-উভয় দিকই রয়েছে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের হেড হান্টিংয়ের দায়িত্ব হয়তো আপনি থার্ড পার্টির ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমি থার্ড পার্টি হেড হান্টিংয়ের বিরোধী নই। এবং, আমি স্বীকার করি, যে, এই পদ্ধতির অনেক এ্যডভানটেজও রয়েছে। সেই সাথে, প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সেবা এভেইল করবার অনেক বাস্তব কারনও রয়েছে।

কিন্তু, স্ট্র্যাটেজিক্যালী এই পন্থার কিছু অসুবিধা বা সমস্যাও রয়েছে। আজ সেটি দেখিয়ে দিতে চাই।

প্রথমেই ভাবুন, বিকল্প কখনো মূল বস্তুর সমান সমান হয় কিনা? বায়োনিক হাত, বায়োনিক হার্ট, পাথরের চোখ, পাশের বাসার ভাবী, সৎ মা, মামাতো বোন, সিলিকন ডল-কেউ ই কি আপনার আপন কারো মতো সত্যিই কখনো হওয়া সম্ভব? আপনার দরকারী ম্যানপাওয়ার বা হিউম্যান রিসোর্স সংস্থান করবার যাবতীয় দায়ীত্ব সামলাতে আপনিতো আপনার HR টিমকে নিযুক্ত করেছেনই। তাহলে সেই কাজটি আরেকটি বাইরের প্রতিষ্ঠানকে করতে দেয়াটা ঠিক কেমন হয়ে যায়? তাহলে তারা কি সক্ষম নন?

তাছাড়া, ভাবুন তো, আপনার একটা অঙ্গের গুরুত্ব আপনার চেয়ে আপনার মাসীর কাছে কি বেশি হওয়া সম্ভব? আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, স্ট্র্যাটেজি, পলিসি ও ভিশনের সাথে হুবহু লীন হয়ে, কপিড/এলাইনড হয়ে আপনার থার্ড পার্টি কর্তৃক আপনার হেড সোর্সিং হওয়া কি তাত্বিকভাবে সম্ভব? ভিশন কি কখনো কপি হয়? আপনার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বৈচিত্রপূর্ণ, জটিলতাপূর্ণ ক্যাপিটাল এ্যসেট বা রিসোর্স, তথা ম্যানপাওয়ার হায়ার/পারচেজ করবার দায়ীত্ব যদি আপনি সম্পূর্ণরূপে তৃতীয় একটি পক্ষকে এসাইন/ডেলিগেট করে দেন, তাহলে তারা আপনার প্রতিষ্ঠানের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজি, পলিসি, কালচার, গোল ও কমপিটেন্সি বেঞ্চমার্ক পারফেক্টলি মিট করে/এনশিওর করে আপনার জন্য হেড সোর্স করতে কতটুকু সত্যি সত্যিই সক্ষম-তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই করে নিন। স্টার, হাইপড, ভাইরাল, ওভাররেটেড রিভিউ বা বিজ্ঞাপনে মজবেন না।

আপনাকে একটা শয়তানি টিপস বলি। আপনার প্রতিষ্ঠান ২০ টি বিভাগ। বিশটার জন্য ২০ জন হেড আছেন। তারা কম-বেশি যার যার সাবজেক্টে দক্ষ, জ্ঞানী, অভিজ্ঞ।

কিন্তু, একটি থার্ড পার্টির কি ২০টি আলাদা বিভাগ থাকবে? থাকলেও আপনার ওই ২০টিই কি তাদের থাকবে? (সেটা কি তাত্বিকভাবে সম্ভব?) আর আপনার ২০টিই যদি তার থাকে, তাহলে ভিন্ন সেক্টরের, বিজনেসের, ইন্ডাস্ট্রির অন্যদের সব বিভাগও কি তাদের থাকে? না থাকলে তারা কীভাবে তাদের যোগ্যতা এ্যসেস করেন-একটু ভাববেন। (#সবাই১ না) আমাকে ভুল ভাববেন না। এখানে আরও আলোচনা রয়েছে। কীভাবে তারা কাজটি করে থাকেন, কীভাবে ম্যানেজ করেন-তার বিস্তারিত না শুনে, না জেনে একতরফা তাদের খাটো ভাবলে আবার ভুল করবেন।

এমনকি, আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে এমন সার্ভিস এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান হতে নিতে অভ্যস্তও হয়ে থাকেন, এবং সন্তুষ্টও থাকেন, তার পরও মাঝে মধ্যেই র্যান্ডম চেক করুন। ঠিক যেমন করে আপনি সাপ্লাই চেইনের জন্য সাপ্লায়ার এনলিস্ট করবার জন্য সূক্ষ্ণতম যাচাই পদ্ধতি অবলম্বন করেন, সেভাবেই ফার্ম চুজ করুন। চুজ ও প্রভেন হয়ে থাকলে মাঝে মাঝেই ক্যালিব্রেশন চেক করুন।

এতক্ষণ বলেছি, থার্ড পার্টির একান্ত নিজস্ব এ্যসেসমেন্ট, এবং তারই মধ্য দিয়ে ফাইনাল ক্যানডিডেট/প্রডাক্ট অনবোর্ড করে দেয়া, মানে রিক্রূটমেন্টের পুরোটা আউটসোর্স করে দেবার দিকটি নিয়ে।

এর বাইরে, কেবলমাত্র প্রোফাইল সোর্সিং বা শর্টলিস্টিং করে দেবার সেবাও যদি নিয়ে থাকেন (এই সেবাটিই মেজরিটি), যেখানে তাদের দেয়া শর্ট রিসোর্স হতে আপনারা চুজ করে ডাকেন ও নিজেরা ইভ্যালুয়েট করেন, সেখানেও সতর্ক হোন। কারন, তারা আপনাকে ১০ টি দিচ্ছে, আপনি ৩টি ডাকছেন, ১ টিকে নিচ্ছেন। এতে আপনার সময়, এফোর্ট, এনার্জি তথা ফাইনালি টাকা সেভ হলেও, গতি বাড়লেও, ঝামেলা কমলেও এতে করে আপনার বাজারটা,তথা হরাইজনটা ছোট হয়ে যাচ্ছে। থার্ড পার্টির আই আপনার আই হয়ে যাচ্ছে। তারা যে ১০ টা দিচ্ছেন, তারাই যে বাজারের সেরা-সেটা আর হবার চান্স থাকছে না।

আপনি উন্মুক্ত বাজার হতে উন্মুক্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজে যাচাই করে নিলে পুরো ট্যালেন্ট মার্কেটের নজরে তা আসবে (১০০% না হলেও সংখ্যায় অন্তত বড়।) ৫০০ জন আগ্রহ দেখাবেন, আপনি ১০০ কে ফিল্টার করবেন, ১০০ জন হতে ১ টা ফাইনাল প্রোডাক্ট পাবেন। অনেক পিওরিফাইড। আর থার্ড পার্টিকে দিলে আপনার দিগন্তটা ১০ জনে সীমিত হয়ে যাচ্ছে। আপনি হয়তো দারুন একটা লোক পাচ্ছেন। কিন্তু, একই সাথে, আপনি বাজারের সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক ও সেরাটাকে না পাবার ঝুঁঁকিতেও পড়ছেন। আপনাকে যে ট্রেন্ডে তারা ডিরেক্ট করবে, আপনার ম্যানপাওয়ার সেভাবে শেপ নেবে। তারা যদি সবসময় বগুড়ার আলু বিক্রেতাদের হতে ১০ রকম আলু সোর্স করে আপনাকে দেখায় আর আপনি সেখান হতে সেরাটা নেন, তাতে বলা যায়, আপনি ভাল আলু পেলেন, বগুড়ার ভাল আলু পেলেন, বগুড়ার সেরা আলুও হয়তো পেলেন, কিন্তু, দেশের সেরা আলু পেলেন না।

আমার একটি ব্যক্তিগত HR ফিলোসফি বলি। সেটা হল, আমি রিভার্স অসমোসিস ব্যবহার করলে পানির যাবতীয় দূষিত বস্তু হয়তো ফিলটার হয়ে যায়, নিশ্চিতভাবেই আমি জীবাণুমুক্ত পানি পাব, কিন্তু, একই সাথে আমি পানির দরকারী মিনারেলকেও হারাবো। ময়লা ছাঁকবার অতি সিলেকটিভ মেথড ও ঝোঁক বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমি দরকারী জিনিসও হারাবো। আমি বিশ্বাস করি এই কবিতায়-

দ্বার রুদ্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি,

সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?

আমি এইচআরে কাজের জন্য ভাল ও খারাপ-উভয়কেই চেখে দেখার পক্ষপাতি। আমি কেবল গোলাপ বাগানে ঘুরব না, আমি ডাস্টবিনেও ঢুঁ মারব। আমি শুধুমাত্র হারভার্ড বা অক্সফোর্ডের ছাত্রদেরই সবসময় জবের জন্য ইন্টারভিউ করব না, বরং হরগঙ্গা কলেজ বা ভুরুঙ্গামারী কলেজেরও কাউকে আমি ট্রাই করব। সবরকম এক্সপোজার HR এর জন্য জরুরী। আমার হয়তো সময় বেশি যাবে, হয়তো পরিশ্রম বেশি হবে। হয়তো Yield ratio গ্যাপ বাড়বে। হয়তো আমি প্রচলিত ট্রেন্ডের ও বিজনেস এপ্রোচের বিপরীত স্রোতে হাঁটছি, তবু ঝুঁকিটা আমি নেব। কারন, রেফারেলের হাত ধরে বায়াস, কোরাম, ফোরাম এর খপ্পরে পড়বার ঝুঁকিও কম মারাত্মক না।

তাই বলে কি আপনি তাদের সেবা নেয়াকে হারাম ভাববেন? না, এই সেবা একটি বহুল প্রচলিত সেবা, এবং এর সুবিধা অনেক প্রতিষ্ঠানই নেন। তবে আপনি যেটা বেস্ট হিসেবে আরও চালু করতে পারেন তা হল আপনি মিশ্র চর্চা করতে পারেন। যেখানে আপনার নিজস্ব ওপেন সোর্সিংও থাকল, থার্ড পার্টিও থাকল, তারপর মার্জ/কমপেয়ার হল, তারপর কমবাইন্ড। ওখান হতে আপনারা নিজেরা ইভ্যালুয়েট করে নেবেন। এতে করে আপনার ট্যালেন্ট অনবোর্ডিং বায়াসনেসের শিকার কম হবে। ভ্যারাইটি ও ডাইভারসিটি বাড়বে। আপনার সিলেকশনের এক্সেলেন্স বাড়বে। কোরাম ও ফোরামের অপছায়া আপনার প্রতিষ্ঠানে কমে যাবে। আপনি রেফারেলের সুবিধাও এনজয় করলেন, আবার মুক্ত আকাশ হতে সোর্সিং চালু রেখে প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতার ক্যাপিটালাইজেশনও করলেন।

আবারও বলি। আমি থার্ড পার্টি হেড হান্টিং সার্ভিস, বা রেফারেল এর একদমই বিরোধী নই। আগেই বলেছি, ওই পন্থার অবশ্যই বাস্তবতা ও এ্যডভানটেজ রয়েছে। লাভ না থাকলে কেন একটি প্রতিষ্ঠান বাড়তি পয়সা খরচ করে তার HR এর কাজ বাইরের কাউকে দিয়ে করাবে? লাভ অবশ্যই হয়।

কিন্তু, আমি বলছি সেই লাভের ট্রেড অফের কথা। বলছি, সেই ট্রেড অফ জানা এবং জেনে এই বিকল্প পছন্দটিকে আরও কার্যকর, নৈতিক, সুদক্ষভাবে কাজে লাগাবার সুযোগ ও পন্থা নিয়ে।

আপনার হেড সোর্সিংকে আপনি এ্যবসলুটলি রেফারেল বা থার্ড পার্টি বেজড করে না ফেলে আপনি এটিকে মিশ্র রাখুন। তাতে আপনার লাভ বেশি বলে আমি মনে করি। কর্মসংস্থান সবসময় উন্মুক্ত থাকার সমর্থক আমি। ক্লোজ ডোর হেড হান্টিং বা হায়ারিং অনেক অনেক আঁধার নিয়ে আসে। তাকে ঘরে ঢুকতে দিলে আপনারই লস।

দ্বার উন্মুক্ত রাখুন।

হেড হান্টিংয়ের জন্য আগের দিনে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবার খুব প্রচলন ছিল। পত্রিকার আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই আসত চাকরির বিজ্ঞাপন ছাপানো হতে। এখনও সেটা অল্পবিস্তর থাকলেও সেই রমরমা অবস্থাটা আর নেই।

বাংলাদেশে হেড হান্টিংয়ের জন্য অনেক একক ব্যক্তির বা ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তবে এ্যবসলুটলি হেড হান্টিং পেশা হিসেবে কতটা বাজার তৈরী করতে পেরেছে ও ভবিষ্যতে পারবে, হেড হান্টিংকে পেশা হিসেবে নেয়া যাবে কিনা-তা সময়ই বলবে। হ্যা, ইনহাউজ হেড হান্টাররা অবশ্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ও যেকোনো এইচ.আরের বিজি গাইজ। কারন, মাইগ্রেশন প্রচুর।

যদিও পপুলারলি বলা হয়, জব মার্কেটের যারা মূল উমেদার, মানে চাকরি প্রত্যাশীরা, বাজারের ড্রাই অবস্থার কারনে তারা ব্যাপক হারে ফ্রাস্ট্রেটেড, কিন্তু, তারপরও কখনো কখনো মনে হয়, যে, বর্তমান সময়ে হেড হান্টিং নিয়ে যারা কাজ করেন, তারাই যেন বরং বেশি ফ্রাস্ট্রেটেড।

চাকরিপ্রার্থীদের নানামুখি কাজকর্ম এর জন্য দায়ী। এটা যেন একটা নাইটমেয়ার।

হেড হান্টিং এবং জব লিংকিংয়ের বিশ্বব্যপী যে কালচার প্রচলিত আছে, যে চর্চা প্রচলিত আছে, তার সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে থাকে আমাদের স্থানীয় জব মার্কেট ও ট্যালেন্ট মার্কেট। ঠিক যেমন একটু আগে বলছিলাম যে, খুব অস্বাভাবিকভাবে আমাদের জি.ডি.পি গ্রোথের বিপরীতে আমাদের এমপ্লয়মেন্ট উল্টো সংকুচিত হচ্ছে। ঠিক তেমনি, বিপুল সংখ্যক বেকারত্বের একটি দেশে প্রথা ও প্রচলিত প্রাকটিসের বিপরীতে এখানকার জব সিকাররা উল্টো আরো বেশি রিল্যাক্সড, রিলাকট্যান্ট, আনকনশাস আর ক্যাজুয়াল।

যে কারনে জব সার্চিং ও জব লিংকিংয়ের কোনো গ্রামারই এখানে কাজ করে না। জব সিকারদের একটি বিশাল অংশই জব সিকিংয়ের প্রচলিত ও প্রত্যাশিত নর্মসের ধারে কাছে দিয়েও যান না।

কী করেন তারা?

আমার একটি লেখায় আমি জব সিকার ও এমপ্লয়ারদের অনুসৃত নানা অনিয়ম বিস্তারিতভাবে দেখিয়েছিলাম। এখানে খুব সংক্ষেপে জব সিকারদের দিকটা প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটু যদি বলি,

-শুদ্ধ ও পূর্ণভাবে প্রোফাইল তৈরী করা,

-একটি ভাল রেজুমে তৈরী করা,

-জব এ্যপ্রোচের প্রচলিত পদ্ধতি ও নির্দেশনা ফলো করা,

-চাকরির প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিশ্চিত করা,

-ইন্টারভিউতে সিরিয়াসলি ও কমপিটেন্টলি এপিয়ার হওয়া,

-সিনিসিয়ারিটি শো করা

এর সবক্ষেত্রেই তারা এমপ্লয়ারদের নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছেন। কমিট করেও এমনকি অনলাইন ইন্টারভিউতে তক অনুপস্থিত থেকে মোবাইলটা বন্ধ করে রাখা-উফ, কী না করছেন তারা।

মাঝখানে হেড হান্টার ও জব লিংকারদের দফারফা। ডিলিং HR এর তো মাথার চুল ছেড়ার দশা। বিশ্বজুড়ে আইডিয়াল Yield ratio যদি হয় ৫:১, বাংলাদেশে সেটা ৫০:১, বিশেষ করে এমপ্লয়ার ব্র্যান্ড হিসেবে যারা বড় সওদাগর নন-তাদের তো অবশ্যই।

আর, এরই মধ্যে খারাপ খবর হল, দেশজুড়ে মেধা ও উদ্ভাবনি শক্তির ইনডেক্সে আমাদের রেটিং ভয়াবহ হারে নামছে। ফলাফল, একটা পজিশন খালি হলে আজকাল আমাদের, মানে HR প্রফেশনালদের রাতের ঘুম হারাম হবার যোগাড় হয়। আমরা জানি, এক একটা খালি পজিশনের জন্য সঠিক তো দূর, মোটামুটি ম্যাচিং একটা মানুষ হায়ার করতে আমাদের কী পরিমান তেল মবিল খরচ করতে হচ্ছে।

মোটা দাগে বর্তমান সময়ে, আমাদের হেড হান্টারদের সবচেয়ে ক্রুশিয়াল চ্যালেঞ্জগুলো কী-বলতে পারবেন? আমি কিছু বলি: –

১.বাজারের ক্রিম ও টপ ক্লাস জবগুলোর একটা বড় অংশ বিভিন্ন কোরাম, ফোরাম, লবি, ইজম ও দেশী-বিদেশী হেড হান্টিং ফার্মের কব্জায় চলে যাওয়া একটা মেজর চ্যালেঞ্জ।

সহায়ক শক্তি হিসেবে তাদের উপস্থিতি একটি বাস্তবতা এবং অবশ্যই উপকারী। তবে, সেটি যদি সিন্ডিকেটাইজড হয়ে পড়ে-তখন আর সেটা আশির্বাদ নয়। হয়েছেও তাই। বাংলাদেশের ওভারঅল কালচারকে আমলে নিয়ে ভাবলে বলতে হবে, তৃতীয় পক্ষের ইনটারভেনশন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা কোনো সেগমেন্টেই দারুন নয়। বিশেষত করাপশন যখন সবখানে। নেপোটিজম ও বায়াজ যখন আমাদের জাতীয় চরিত্র।

২.ওভারঅল ট্যালেন্ট মার্কেট ও জব মার্কেটে ট্যালেন্ট ও ইনোভেশন ইনডেক্সের পড়তি মান আমাদের কাজটাকে দুরহ করে দিচ্ছে।

সমুদ্রে যদি পানি কমে যায়, খালে, পুকুরে পানি প্রবাহ শুকিয়ে যেতে বাধ্য। হচ্ছেও তাই। বেকার প্রচুর, চাকরি সীমিত। অথচ, বিদ্যমান ওপেনিংয়ের বিপরীতে একজন পারফেক্ট ম্যাচ খুঁজতে, একজন পারফেক্ট ম্যাচকে রিচ করতে বা করাতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে হেড হান্টারদের। আমাদের ট্যালেন্ট মার্কেটের টপ ক্লাস পার্টিসিপ্যান্টরা হয় বিদেশ চলে যাচ্ছেন, অথবা, একটা বড় অংশই সরকারী চাকরির জন্য আটকে থাকছেন বছরের পর বছর। এর পরে যারা থাকছেন, তাদের একটা বড় অংশই মূলত বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য সবসময়ই লালায়িত। বাকি থাকল যা, সেখান হতে বেছে নেবার চাপ যখন তৈরী হয়, স্বাভাবিকভাবেই টাফনেসটা বাড়ে। আবার অভিজ্ঞ কর্মী খোঁজার দরকার দেখা দিলে অবস্থা ত্রিশঙ্কূ।

হার্ডস্কিল মিললে সফট স্কিল মেলে না। সফট স্কিলে ভাল হলে পারসনালিটি তথৈবচ। বিশেষভাবে লিডারশিপ আর কমিউনিকেশন স্কিলে আমাদের সীমাহীন দুর্বলতা। সিনিয়র মোস্ট পজিশনে লোক নেবার সময়ও আমাদেরকে অত্যন্ত সংকোচের সাথে, বুঝেশুনে চাকরি প্রত্যাশীর ইংরেজির বহরটা যাচাই করে নিতে বাধ্য হতে হয়। ডিফল্ট ওখানে আমরা জিরো শর্ট বলে।

৩.শিক্ষাক্রম ও চাকরির বাজারের চরিত্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিপরীতমুখী যাত্রা একটা বহুল আলোচিত অসঙ্গতি।

চাকরি খালি-উপযুক্ত জ্ঞান ও দক্ষতার মানুষ নেই। আবার, লাখ লাখ ডিগ্রীধারী মানুষ, তাদের ডিগ্রীর সাথে ম্যাচিং জব নেই। যদিও সত্যিকারের বিচারে ক্যারিয়ার ও এমপ্লয়মেন্ট হল শিক্ষার একটা বাই-প্রোডাক্ট, তবুও আমাদের মতো একটি গরীব দেশে একাডেমিক শিক্ষা তথা ডিগ্রী শেষ করে তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ হয়ে একটা ভাল চাকরি মেলানোই যেখানে প্রায় ১০০ ভাগ মানুষের মনোজাগতিক বিশ্বাসের অংশ, সেখানে পড়া শেষে চাকরি মিলছে কিনা, পড়ার সাবজেক্ট অনুযায়ী জব তৈরী হচ্ছে কিনা-সেখানে বিশাল শূন্যতা। বিশাল ব্যবধান। আবার, অর্থনীতি ও বানিজ্যের স্বাভাবিক সহজাত টানে যে এমপ্লয়মেন্ট মার্কেট যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, তার জন্য ট্যালেন্ট মার্কেট একদমই প্রস্তুত নয়। দুই মার্কেটে বিপুল গ্যাপ। তার সাথে ইদানিং বেশ কিছু বছরে যেই নতুন যন্ত্রনা যুক্ত হয়েছে, সেটা হল, এমনকি শিক্ষিত গ্রাজুয়েট (এবং অবশ্যই নন-গ্রাজুয়েটদেরও) শ্রেণীর মধ্যে সাধারন লাইফ স্কিল ও মানবিক সক্ষমতাগুলো পর্যন্ত খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। একজন শিক্ষিত গ্রাজুয়েট একটা সামান্য স্ট্যাপল করতে জানেন না, একটা ফোনকল প্রফেশনালী করতে সক্ষম নন, দশটা কাজ দিলে ৮টাও মনে রাখতে সক্ষম নন, বাজার হতে অফিসের প্রোগ্রামের জন্য দুটো জিনিস এপ্রোপ্রিয়েটলি কিনতে সক্ষম নন, সময় মতো অফিসে আসতে অভ্যস্ত নন-এমন ভয়াবহ অবনমন আমরা লক্ষ্য করছি অনেক দিনই।

এই যখন সিচুয়েশন, তখন হেড হান্টারদের অবস্থা বলাই বাহুল্য।

৪.আমাদের অন্যতম ঝামেলা বিদ্যমান ও কাঙ্খিত দক্ষতার বিপুল ফারাক। এর মাঝে পড়ে জেরবার হচ্ছেন হেড হান্টাররা। ফ্যাক্ট হল, হেড হান্টিং পিপলের ব্যাক আপ টিম, মানে রিক্রূটার টিমের একটা বড় অংশেরই একটি পারফেক্টলি ডিজাইনড কমপিটেন্সি ম্যাট্রিক্স ও বেঞ্চমার্ক তৈরী করা নেই। আমাদের প্রচুর অভিজ্ঞতা হয়, যেখানে আমরা দেখি, এমপ্লয়ার নিজেও জানেন না, আসলে তার ঠিক কেমন মানুষটাকে চাই। এক প্রতিষ্ঠানে বিপুল সাফল্য ও যোগ্যতা নিয়ে কাজ করা মানুষটা একই রকম পজিশনে জবের জন্য এপ্লাই করলে তাই শুনতে পান, উনি তো গুড ফর নাথিং। যাচ্ছে তাই।

ওদিকে আবার, জব মার্কেটের জব এ্যসপিরেন্ট যারা, তাদেরও একটা বড় অংশের কাছে পরিস্কার না, যে, এমপ্লয়াররা ঠিক কী খুঁজছেন। এই যখন অবস্থা, তথন ম্যাচ মেকার হিসেবে হেড হান্টারদের দফারফা।

৫.সিনসিয়ারিটি আর সিরিয়াসনেসের মতো মানবিক গুন বা সক্ষমতারও তথৈবচ অবস্থা। চাকরি প্রত্যাশীদের প্রফেশনালিজম, সিরিয়াসনেস ও সিনসিয়ারিটির বিপুল ঘাটতি হেড হান্টারদের কাজটাকে আরও দুরহ করে দিচ্ছে। বিশেষ করে ডেসপারেটভাবে যারা হেড হান্টার ও জব লিংকারদের এপ্রোচ করেন, (এমপ্লয়ার ও এমপ্লয়ী-উভয় দিকেই), সেই ডেসপারেট সত্তাদের সময় পাল্টালেই চোখ উল্টে ফেলার বা পাল্টি খাবার ঘটনা আকছার। মাঝে পড়ে হেড হান্টার বা জব লিংকাররা বিব্রত হন। ব্যক্তিগত সময় ও এফোর্টের চুড়ান্ত অপচয় হয়, যখন কোথাও কাউকে রেফার করে বেওকুফ সাজতে হয়। নাকটা কাটা পড়ে যখন।

৬.সত্যিকার অর্থে চাকরির বাজার, বিশেষত শিল্প চাকরির বাজারের জন্য দরকারী দক্ষতা ও যোগ্যতার যোগান দিতে পারে-এমন মানসম্মত প্রতিষ্ঠানও খুব বিরল। ধান্দাবাজ ও ফাপরবাজের সংখ্যা প্রচুর।

৭. সামাজিক অবনমন এবং প্রকৃত গ্রুমিংয়ের অভাবে হোয়াইট কলার এবং মূলত অফিস বেজড ক্ল্যারিক্যাল জবের প্রতি অতি ঝোঁক।

৮.হেড হান্টিং প্রসেসে টেকনোলজির ব্যবহারের সীমাবদ্ধতাও আমাদের ভোগায়। আবার, প্রসেস ও টেকনোলজির ব্যবহারে সিরিয়াস হবার ক্ষেত্রে চাকরি প্রত্যাশীদের ব্যপক অনীহাও বড় মাথাব্যাথা। প্রায়ই দেখবেন, একটা কথা ইথারে ভেসে আসে, দেশে ২ কোটি বেকার, অথচ বিডিজবসে ৮০% প্রোফাইলই ইনকমপ্লিট। সুপার ফিলট্রেশন দিলে, বা, ATS ব্যবহার করলে রেজুমে তলায় পড়ে ১%। ক্যানডিডেটরা মেইল চেক করেন না। ইন্টারভিউ মেইল করলে তা পড়েন না। ওদিকে এমপ্লয়াররা অনলাইন ইন্টারভিউ শুনলেই নাক কুঁচকান। দেশের ইন্টারনেটের গতির কথা আর বললাম না। ই-রিক্রুটমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনোলজি, সল্যুশন, ইকুইপমেন্ট-খুব বিরল। একটা সাইকোমেট্রিক টেস্ট নেবেন-এতই এক্সপেনসিভ আর সব প্রার্থী এর সাথে কোপ করতেও পারেন না।

৯.বাজারে অন্তত দশটি ভাল মানের, সার্বজনীন, জনপ্রিয় ও বড় আকারের কমোন জব পোর্টালের অনুপস্থিতির কারনে হেড হান্টারদের অসংখ্য মাধ্যম হতে হেড সোর্স করার ঝক্কি বহন করতে হচ্ছে। আমাদেরকে দুটো যায়গার বদলে পঞ্চাশটা বাজারে ট্রেইল করতে হচ্ছে একটা সঠিক মানুষের খোঁজে। আবার, জব পোর্টাল ও জব লিংকারদের নানা অসঙ্গতির কারনে জব সিকাররাও ইতস্তত নানা স্থানে ঘুরে মরছেন।

১০.জব মার্কেটে অপারেট করছে-এমন সব প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য খুব একটা আগ্রহ দেখান না। দেখালেও বাজেট খুবই সীমিত। ফলে বাজারের বিদ্যমান ট্যালেন্টের সাপ্লাইয়ের ওপর ইকুয়াল এ্যকসেস সব হেড হান্টারের থাকে না। নিচের সারির প্রতিষ্ঠানের হেড হান্টাররা তখন মাত্রাতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ ফেস করেন।

১১.বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট ডেটা ও তথ্যের অপর্যাপ্ততা আর অথেনটিসিটির ঘাটতি হেড হান্টারদের কাজের মান ও গতি কমিয়ে দেয় অনেকটা। এই যামানাতে ডেটা না থাকলে অন্ধের মতো কাজ করতে হয়-এই দুঃখ কোথায় রাখি। হ্যা, ডেটা বিক্রী হয়, তবে সেটা খুবই দাম আর সব প্রতিষ্ঠান এত সফিসটিকেটেড হায়ারিং প্রসেসে বিশ্বাসও করে না।

মনে রাখবেন, এই লেখায় আমি কেবলমাত্র হেড হান্টিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করছি। ট্যালেন্ট একুইজিশনের পুরোটা এখানে কভার করা হচ্ছে না। হেড হান্টিং ট্যালেন্ট একুইজিশনের একটি অংশ মাত্র। হ্যা, প্রাসঙ্গিকভাবে আশপাশে কিছু কথা চলে আসবে, আসছেও।

হেড হান্টিংয়ের সফলতা নির্ভর করে নিখূঁত স্ট্র্যাটেজি, সময়োপযোগী মেথড, ডায়নামিক ড্রাইভ, সফিসটিকেটেড টেকনিক ও মডার্ন এপ্রোচের ওপর। বিশেষত হেড হান্টিং প্রতিষ্ঠান এবং তার হেড হান্টার তথা চাকরি প্রত্যাশী শিকারীর ভুল এপ্রোচ হেড হান্টিংয়ের অসফলতার অন্যতম দায়ী ফ্যক্টর।

হেড হান্টিংয়ের সফলতা বাড়াতে একজন হেড হান্টার কী কী করতে পারেন?

১ম, তার নিখূঁত স্ট্র্যাটেজি দরকার। যেততেন ভাবে বিজ্ঞাপন আর ইন্টারভিউ করে কর্মী অনবোর্ড করবার দিন বেশ কিছু বছর আগেই শেষ হয়েছে। এখন সময়টা প্রতিযোগীতার। বাজারে উপযুক্ত পণ্য তথা যোগ্য কর্মীর সাপ্লাই সুপ্রচুর না। আপনাকে আবারও বলছি, বাজারে চাকরি প্রত্যাশী অনেক হতে পারে, তার মানে এই না, যে, সবদিক হতে প্রস্তুত ও যোগ্য কর্মীর সাপ্লাইও সেরকমই সুপ্রচুর। তাই, আপনাকে স্ট্রাটেজিক হতে হবে। হেড হান্টিংকে আপনার এইচ.আর পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটিজিক কমপোনেন্ট হিসেবে এডপ্ট করুন।

স্ট্র্যাটেজিক্যালী আপনাকে একটা পথ অনুসরন করতে হবে। তা হল, ডাইভারসিটি ও মাল্টিডিসিপ্লিনারী মুভমেন্ট। একটু খুলে বলি।

হেড হান্টিংয়ের সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হতে পারে একাধিক সোর্স ব্যবহার করা। একজন এ্যকটিভ ও এফেকটিভ হেড হান্টার কখনো একটিমাত্র উৎসের ওপর ভর করেন না। আমি আপনাকে কিছু অলটারনেটিভ ওয়ে বলছি: –

১. (ক) বিডিজবস: যেকোনো বিচারে এটি এখনো জব সিকার ও হেড হান্টারদের অন্যতম বড় একটি মিলন স্থল। বিডিজবসে একদিকে আপনি যেমন চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে তার বিপরীতে আগ্রহী চাকরি প্রত্যাশীদের প্রোফাইল পেতে পারেন। তার বাইরেও, তাদের রেজুমে ব্যাংক হতে প্রোফাইল সংগ্রহ করতে পারেন।

১.(খ) লিংকডইন: লিংকডইনকে হেড হান্টিংয়ের জন্য অনেকভাবে ব্যবহার করা যায়। এখানে একটি নিয়মিত পোস্ট আকারে আপনি আপনার দেয়ালে কিংবা লিংকডইন গ্রুপে চাকরির বিজ্ঞাপন যেমন দিতে পারেন, তেমনি পারেন, লিংকডইনের প্রেসক্রাইবড জব পোস্টিং ফরম্যাটে পোস্ট দিতে। দুটোরই রিচ ভাল। এর বাইরেও, আপনি এখানে সার্চ মেথড ব্যবহার করে আপনার কাঙ্খিত প্রফেশনালদের প্রোফাইল রেফারেন্স পেতে পারেন। সেই সাথে, লিংকডইনে আপনার পেশাগত নেটওয়ার্ককে ভর করে কাঙ্খিত একজন প্রোফেশনালকে সরাসরি নক করবার সুযোগ তো আছেই। তার বাইরেও, লিংকডইন চ্যানেল ধরে অনেকেই আপনাকে আগে পরে জবের জন্য এ্রপ্রোচ করে থাকবেন। এই হার লিংকডইনে বেশি। তাদেরও আপনি নক ব্যাক করতে পারেন।

১.(গ) ফেসবুকেও লিংকডইনের মতো দু’রকম করে বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক খোঁজা যায়। সেই সাথে, এখানেও হাজার হাজার পেশাজীবিদের স্পেশালাইজড গ্রুপ থাকে। সেখানে বিজ্ঞাপন দিলে, অথবা, সেখানে নজর রাখলেও আপনি অনেক চাকরি প্রত্যাশীকে রিচ করতে পারবেন। তাছাড়া, ফেসবুকের ইউজার প্রচুর। রিচ বেশি, এনগেজমেন্টও বেশি। ফেসবুকে আপনার প্রতিষ্ঠানের পেইজ খুলুন, নিয়মিত বুস্ট করুন, ইনবক্স চেক করুন। ফেসবুককে ক্যান্ডিডেট সোর্সিংয়ের জন্য ব্যবহার করা এখন একটি বড় সাপোর্ট। হ্যা, ফিলট্রেশন না থাকায় একটু বাড়তি কষ্ট করতে হয়।

১.(ঘ) গ্লাসডোর, মনস্টার জবের মতো স্পেশালাইজড ও অভিজাত জব পোর্টালের সাহায্য যেমন নিতে পারেন, তার বাইরেও এখন প্রচুর জব পোর্টাল হয়েছে, যার অনেকগুলো খুব ভাল কাজ দেখাচ্ছে। তাদের সবাই পেইড সার্ভিসও না, কমপ্লিমেন্টারী। সেগুলোর হেল্পও নিন।

১.(ঙ) আপনার প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনাল রেফারেলকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করুন। বিশেষত বিভিন্ন বিভাগের বিদ্যমান কর্মীদের হোয়াটসএ্যপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত করুন। নিয়মিত সেখানে আপনার বিজ্ঞাপন প্রচার করুন। যে বিভাগের লোক দরকার, তাদেরকে সবসময় হেড সোর্সিংয়ের জন্য সিরিয়াসলি কাজ করতে দিন। ইন্টারনাল রেফারেলকে সবসময় উৎসাহিত করুন, লাগলে পুরষ্কৃত করুন।

১. (চ) আপনার ব্যক্তিগত অথবা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটি রেজুমে ব্যাংক রাখুন। সেখানে ক্লাসিফায়েডভাবে রেজুমে সাজিয়ে নিন। এই কাজে গুগল ফরম ব্যবহার করলে সাফল্য বাড়বে। দরকার পড়লে সেখান হতে সাহায্য নেবেন।

১.(ছ) আপনার সোশ্যিও-প্রোফেশনাল নেটওয়ার্ককে হেড সোর্সিংয়ের জন্য ব্যবহার করুন। হোয়াটসএ্যপ ও টেলিগ্রামে যেসব প্রফেশনাল ফোরাম আছে, সেখানে বিচরন করুন। সেখানেও বিজ্ঞাপন দিন। বিশেষত হেড হান্টার হিসেবে যারা পপুলার, তাদের এপ্রোচ করুন। ওয়ান টু ওয়ান মেসেজ করে ভাল প্রোফাইল সোর্স করতে পারেন।

১.(জ) বেশি ঠেকায় পড়লে থার্ড পার্টি হেড হান্টিং ফার্মের সহায়তা নিতে পারেন।

১.(ঝ) পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যদিও আজকাল কেউ তেমন দেন না, তবুও, সেটা একটা সোর্স বটে। এর বাইরেও আপনি অবস্থা বুঝে পোস্টারিং, লিফলেট, ব্যানার, মাইকিংয়ের সাহায্যও নিতে পারেন-যদি সেটা প্রযোজ্য হয়।

১.(ঞ) সারা বছর জুড়ে জব ফেয়ারে যোগ দিন। এতে আপনার হেড হান্টিংয়ের সব কার্যক্রমের রিচ বাড়বে।

১.(ট) আপনার সবগুলো অফিসের গেইটে একটি রেজুমে কালেকশন বুথ/বক্স রাখাকে এখনো তুলে দেবার সময় হয়নি। ওটা রাখুন।

১.(ঠ) অন্যদের চাকরির বিজ্ঞাপনে নজর রাখুন। অনেক সময় ভাল ক্যনডিডেট অন্যের বিজ্ঞাপন হতেও মিলে যায়।

১.(ড) আপনার ওয়েবসাইটের সাথে আপনাদের একটা মেইল আইডি ট্যাগ রাখুন। সেই মেইল নিয়মিত চেক করুন।

১.(ঢ) বিভিন্ন ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও ইনটার্যক্ট করুন। ওনারাও আপনাকে ক্যনডিডেট রেফার করতে সক্ষম।

২য়, সময়োপযোগী মেথড ফলো করুন। গতানুগতিক মেথড ও প্রক্রিয়া চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে আনপপুলার হয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামে থাকা একজন যোগ্য চাকরি প্রত্যাশী আপনার ডাক পাওয়া মাত্র ঢাকায় ইন্টারভিউ দিতে এসে পড়বেন-সেটা যদি সম্ভব হয়ও, সবদিক হতে সব ম্যাচ করবে-সেই সম্ভাবনা ১০০ তে ১০০ না।

মোটা দাগে ও সাদা চোখে বললে হেড হান্টিংয়ের চারটি মেথড আপনার কাজের জিনিস হতে পারে-

২. (ক) বরশি মেথড: এটি হল বরশিতে মাছ ধরবার মতো মেথড, যেখানে আপনি নিস্তরঙ্গ পানিতে সম্ভাব্য মাছ থাকার স্থানে টোপ ফেলবেন। চারা ফেলবেন। গন্ধে গন্ধে মাছ আসবে। টোপ ও বরশিতে ঠোকরাবে। ন’টা টোপ মিস যাবে। ১টা সফল হবে, যেখানে মাছকে টান মেরে বরশিতে গেঁথে ডাঙায় তুলবেন আস্তে আস্তে।

এই মেথড ভাল না লাগলে,

২.(খ) আপনি পোলো বা কোঁচ মেথড ফলো করতে পারেন। এই মেথডটা হল, যেখানে মাছ, মানে মাথা থাকবে, সেখানে যাবেন, দেখেশুনে টারগেট মাছটাকে পোলো দিয়ে আটকে অথবা কোঁচ দিয়ে গেঁথে তুলবেন। এই পদ্ধতির সফলতা বেশি, তবে ইনভেস্টমেন্টও বেশি।

২.(গ) জাল মেথডও আপনার জন্য কাজের জিনিস হতে পারে, যেখানে বড় জায়গা জুড়ে, ট্যালেন্ট মার্কেট ও জব মার্কেটে জাল ফেলবেন, আর মাছ তাতে ধরা পড়বেই। মূলত আমরা বেশিরভাগ এখনো এই মেথডেই আছি।

২.(ঘ) আবার ভাত ছেটানো মেথডও হতে পারে আপনার অনুসৃত পদ্ধতি, যেখানে ফাঁকা ছাদে ভাত ছেটালেন, এই ভেবে যে, কাক ক্ষিধে থাকলে নিজেই খুঁজে খেতে আসবে। এই পদ্ধতিতেও যে কর্মী মেলে না-তা কিন্তু না। মূলত ৩/৪ কোটি বেকার বা ছদ্ম বেকার যে দেশে, সেখানে এমনকি মরুর বালু খুড়লেও দু’চারজন চাকরি প্রত্যাশীর দেখা মেলাটাই স্বাভাবিক।

৩য়,এইচ.আর হতে ডায়নামিক ড্রাইভ নিতে হবে হেড হান্টিংয়ের জন্য। মূলত হেড হান্টিং একটি নিবিড় ও কমপ্রিহেনসিভ ড্রাইভ, যার সাথে প্রতিষ্ঠানের এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিং টিম, অন্য আরও টিম নিবিড়ভাবে কাজ করতে হয়। হেড হান্টার ও তার এইচ.আরকে খুবই ডায়নামিক হতে হবে। মান্ধাতার আমলের নিয়মকানুন, প্রক্রিয়া, ব্যুরোক্রেসি, দীর্ঘ প্রসেসিং, অতিরিক্ত কড়াকড়ি-আধুনিক এইচ.আরের অনুসঙ্গ নয়।

৪র্থ, হেড হান্টারকে সফিসটিকেটেড টেকনিক ও টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। টেকনোলজি হিসেবে ATS কিংবা হালের /ChatGPT কিংবা AI তো হেড হান্টিংসহ পুরো ট্যালেন্ট একুইজিশন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ অলরেডি হয়ে গেছেই। টেকনিকেও আনতে হবে নতুনত্ব।

সবসময় চাকরি প্রত্যাশীই চাকরিদাতাকে খুঁজে বের করবে-সেই পথেই না হেঁটে পাহাড়ও মহম্মদের কাছে যাবার টেকনিকটা হেড হান্টারকে জানতে হবে। বাজারের চাকরি প্রত্যাশী ও বিদ্যমান ট্যালেন্ট মার্কেটের চরিত্র বিশ্লেষণ করে হেড হান্টারকে তার টেকনিক এডজাস্ট ও আপডেট করতে থাকতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যাবতীয় ইন্টারভিউয়ের প্রথম সেশনটি বাই ডিফল্ট অনলাইনে হয়, যা উভয় পক্ষের সময়, অর্থ, এনার্জি, এনথাজিয়াজম বাড়ায়, আমাদের সাকসেস রেটও বাড়ায়।

হেড হান্টিংয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ক্যান্ডিডেট এ্যসেসমেন্ট। এই প্রক্রিয়াতে এ্যসেসমেন্ট সেন্টারসহ আরও অন্যান্য মডার্ন টুলস ব্যবহার করলে সাকসেস রেট বাড়বে।

৫ম, এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিংকে সিরিয়াসলি নিতে হবে। এটা ছাড়া আপনি বাজারে আসা (জব মার্কেট ও ট্যালেন্ট মার্কেট) সামান্য সংখ্যক ট্যালেন্টের রিচ পাবেন না। সব জায়ান্টরাই শুষে নেবে। আপনার ভাগে থাকবে বাজারের উচ্ছিষ্ট।

ভেবে দেখুন তো, গড়পড়তা আপনার প্রতিষ্ঠান যাদেরকে ফাইনালি ইন্টারভিউ করবার জন্য সিলেক্ট করেন, তারা গড়পড়তা বাজারের কেমন সারির চাকরি প্রত্যাশী? তারা সব ফার্স্ট ক্লাস কোয়ালিটির? আচ্ছা, আপনাদের Yield Ratio কত-জানেন কি? না জানলে হিসেব করে বের করুন।

এই রেশিওই আপনাকে আন্দাজ দিয়ে দেবে, চাকরির বাজারে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনাদের অবস্থান কেমন। আপনার প্রতিষ্ঠান যদি চাকরির বাজারে নিজেকে একটা ব্র্যান্ড নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাড়া করাতে না পারে, তাহলে কখনো আপনারা বাজারের এভেলেবল সেরাটা বাগাতে পারবেন না।

এমনিতেই দেশে ব্রেইন ড্রেইন, বিদেশ যাত্রা, সরকারী চাকরির বাজারের খেলোয়াড়, এসবের বাইরে নানা রকম উচ্চবংশীয় কোম্পানীগুলোর ফাঁক গলে আপনার কাছে কারা এপ্রোচ করেন জবের জন্য, জব এ্যডের বিপরীতে-তাদের তালিকাটাতে একটু নজর দিন। ব্র্যান্ডিং মানে ফাঁপা ব্র্যান্ডিং বা বিজ্ঞাপনকে বোঝাচ্ছি না। সত্যিকারের একটা ব্র্যান্ড হয়ে উঠবার জন্য আপনার OD, HR policy & culture development আর সোশ্যাল এক্সপোজারে নজর দিন। মানুষ, যারা ভেতরে কাজ করছে, তারা যেন এখানে কাজ পেয়ে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন (সার্বিকভাবে মেক ইওর অরগানাইজেশন আ হোম ফর দেম) আর যারা জব সিকার, তাদের কাছে যেন আপনি একটা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানের এ্যভাটার হয়ে ওঠেন-সেভাবেই ব্র্যান্ডেড হোন।

রিজেক্ট হয়ে যাওয়া রেজুমিগুলো ফেলে না দিয়ে একটু এনালিসিস করুন। আমরা করি। আপনার প্রতিষ্ঠান যেন বাজারের চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান হয়-ব্র্যান্ডিংয়ের কে.পি.আই সেভাবেই ঠিক করুন।

মনে রাখবেন, ওভারঅল, বাজারে ট্যালেন্টের সাপ্লাই খুবই কম। তাতে প্রতিযোগিতা আবার তীব্র। এমপ্লয়ার ব্র্যান্ডিংয়ের পেছনে খরচ করতে যদি কাঁটা কাঁটা লাগে, তাহলে ভেবে দেখবেন। বাজারের যেকোনো ব্র্যান্ড পণ্য, সেটার যে মোট প্রোজেক্টেড দাম, তার ৭৯% ই ব্র্যান্ড ভ্যালু বাবদ ধরা হয়। বাকি ২১% হল পণ্যটির নিখাঁদ র ম্যাটেরিয়াল ও প্রোডাকশন কসট বাবদ। ভাবুন তো, ব্র্যান্ডিংয়ের ভ্যালু প্রপোজিশন কত?

ষষ্ঠ,  ও আমার মতে হেড হান্টারের মডার্ন, লিবারেল, ডায়নামিক, প্রো-এ্যকটিভ ও ফ্লেক্সিবল এপ্রোচ হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। মূলত আপনার এপ্রোচের ওপরই নির্ভর করে আগের পাঁচটি পন্থার কার্যকারীতা ও উপস্থিতি।

আপনার এপ্রোচ যদি হয়-ভাত ছিটালে কাকের অভাব হবে না-তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠান জীবনে কাক পেতেও পারেন, কোকিল পাবেন না। এই এপ্রোচের আধুনিকায়ন হতে পারে এনিথিং। একটা ছোট উদাহরন বলি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের এইচ.আর কিছু মূলনীতি মেনে চলে, তার একটা হল, আমরা চাকরীপ্রার্থীদের কোনো স্থানে ‘চাকরিপ্রার্থী’ নামে মেনশন করি না। আমরা বিশ্বাস করি, চাকরি প্রার্থনার জিনিস না। চাকরি কেউ কেন কারো কাছে প্রার্থনা করবে।

চাকরি হল মিউচুয়াল ইনটারেস্টের একটা সেলস কনট্রাক্ট। তাই আমরা তাদের বলি চাকরি প্রত্যাশী। এ্যপ্লিকেশন ফর জব না বলে আমরা সবসময় বলবার প্রাকটিস করি ‘এপ্রোচ ফর জব।” এরকমই ছোট ছোট ডিটেল হতে বড় বড় বিষয়েও আপনার সঠিক এপ্রোচের প্রয়োগ ও ছাপ থাকতে হবে। এপ্রোচ সঠিক হলে আপনার এ্যকশনও সঠিক হতে বাধ্য।

হেড হান্টিং হতে পারে একটিভ এপ্রোচে, যেখানে আপনার প্রতিষ্ঠানের ঠিক যেই কমপিটেন্সি দরকার সেটিই ও সেইটুকুই শুধু খুঁজবেন প্রার্থীর মধ্যে। আবার হতে পারে প্যাসিভ বা প্রো-এ্যকটিভ এপ্রোচে , যেখানে তার যা আছে, তা আপনার চাই কিনা, অথবা, এখন না চাইলেও অদূর ভবিষ্যতে সেটির দরকার পড়তে পারে, বা, অন্তত সেটিকে ট্রান্সফরমড করে ব্যবহার করা যাবে কিনা-তা যাচাই করবেন।

আপনাকে মনে রাখতে হবে, বাজারে প্রচুর বেকার থাকলেও উপযুক্ত ও ম্যাচিং কর্মীর সাপ্লাই কম। তাই, আপনাকে রিজিড হলে চলবে না। নিয়মের বেড়াজালে আটকে থাকলে লোক পাবেন না। তাছাড়া দিনকে দিন বাজারে রেডি ট্যালেন্ট এর সাপ্লাই আরও কমবে। কমে যাবে হেডেরও সংখ্যা, কমে যাবে তাদের মধ্যে বিদ্যমান কমপিটেন্সির পরিমান। তাই, আপনাকেই ব্যবসার স্বার্থে আগ বাড়িয়ে তৈরী মানুষ পাবার বদলে মানুষ তৈরী করে নেবার দায়ীত্ব ও উদ্যোগ নিতে হবে। রেডি প্রোডাক্টের ওপর বেশি ভরসা না করে নিজেরা লোক রেডি করে নেবার বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক বলি। দিনকে দিন এই বিষয়টা একটা বাধ্যতায় দাড়াবে। আপনি বাধ্য হবেন আপনার ম্যানপাওয়ারকে নিজেই আপস্কিল ও রিস্কিল করে রেডি করে নিতে। সেটা ইনহাউজ ও এক্সটারনাল ড্রাইভের মধ্য দিয়েই।

মূলত চাকরি প্রত্যাশী ও কর্মীদের ওই প্রতিষ্ঠান কোন চোখে দেখে, কর্মীদের মূল্যায়ন তাদের কাছে কীসের প্রতিভূ-সেটাই প্রতিষ্ঠানের হেড হান্টিংয়ের এপ্রোচ ও স্ট্র্যাটেজি নির্ধারন করে দেয়।

হেড হান্টিংয়ের একটা সহযোগী কাজ হল ট্যালেন্ট ইভ্যালুয়েশন। সেখানে আমরা প্রায় সবাইই একটা ফ্ল্যাট এসেসমেন্ট কালচারের বিপরীতে সব বিভাগের সব রকম পজিশনের সব রকম স্পেসিফিকেশনের প্রার্থীকে অনেকটা কস্টি পাথরে সোনা যাচাই, অথবা, এক ক্ষুরে সবার মাথা মুড়োনোর মতো করে যোগ্যতা যাচাই করি।

ফ্যাশন ডিজাইনারেরও যেই এসেসমেন্ট, আবার, এইচআর অফিসারেরও সেই একই এসেসমেন্ট, যা মূলত, একই অভিন্ন যোগ্যতার বেঞ্চমার্কের বিপরীতে, বা, একই আঁতশ কাঁচের নিচে কে কতটা কমপ্যাটিবল-সেটা যাচাই করছি। তাতে করে, অনেকটা, জেনিটার হতে জেনিফার-সবার কাঙ্খিত অভিন্ন যোগ্যতাকে আমরা একই ধরে ইন্টারভিউ করছি।

এই ভাবনাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। স্টার ক্যানডিডেট শুধু এট্রাক্ট আর পুল করলেই তো হবে না, যোগ্য ক্যানডিডেট হলে তারাও চুজি ও সিলেকটিভ হবেন, তারা ডাক পেলেই অন্য জবে যাবেন না। তাদেরকে আকৃষ্ট করতে হলে আর তারা আকৃষ্ট হয়ে ইন্টারভিউ দিতে এলে রিক্রূটমেন্ট প্রসেসিং যদি প্রফেশনাল আর স্মার্ট না হয়, তাহলে তারাও বিরক্ত হবেন আর দুর্নাম ছড়াবেন, আর আপনিও দেখবেন, আপনার ইন্টারভিউয়ার আপনাকে বলছেন-”কী সব গরু গাধা ধরে আনেন!” অথচ ওই লোক হয়তো বাজারের টপ ৩ জন ক্যানডিডেটের একজন।

হেড হান্টিং আর ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশন হতে হবে এলাইনড ও সিংক্রোনাইজড। অন্যথায় টপ অর্ডারে অর্থাৎ হেড হান্ট করতে হয়তো আপনি বেগ পাবেন না, মানুষ জালে আটকাবে (কুঁচো মাছের মতো), তবে টেল এন্ডে, মানে এ্যকুইজিশনে কিন্তু আপনার সফলতা কমবে। ফলত, তাতে হেড হান্টিংয়ের পেইন বাড়বে বই কমবে না। তাছাড়া মনে রাখবেন, ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশনের অনেকগুলো মেট্রিকস ও কে.পি.আই আছে। আপনার কে.পি.আই এ্যচিভমেন্ট রেট কমতে বাধ্য।

আপনার ট্যালেন্ট এ্যকুইজিশনের পুরো প্রক্রিয়াটাই ঢেলে সাজাতে হবে-ম্যানপাওয়ার প্ল্যানিং ও বাজেট তৈরী, রিকুইজিশন জেনারেট ও ভ্যালিডেশন, জব সার্কুলেট করা ও প্রোফাইল সংগ্রহ, স্ক্রিনিং ও শর্ট লিস্টিং, ফোন ইন করে সেটাকে আরও ছোট করে আনা, ইন্টারভিউ শিডিউল করা, ইন্টারভিউ প্রস্তুতি ও ইন্টারভিউয়ারদের প্রস্তুতকরণ, যাবতীয় আধুনিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার প্রয়োগ (হায়ারিং অবশ্যই হবে কমপিটেন্সি বেজড হায়ারিং। যেখানে অনেক কমপ্রিহেনসিভ ও ইনটেনসিভ প্রসেস যুক্ত থাকবে। সেই কমপ্রিহেনসিভ ও ইনটেনসিভ হওয়াটাকে আমি ব্যপক অর্থে বলছি। বিশেষত এ্যসেসমেন্ট সেন্টার পদ্ধতির প্রয়োগ।), নিরপেক্ষ ও যুগোপযোগী মূল্যায়ন ও সিলেকশন, এপয়েন্টমেন্টের আনুষ্ঠানিকতা, জব কনফারমেশন হতে অনবোর্ডিং পার হয়ে ৬ মাসের ফলোআপ প্ল্যান ও ওরিয়েন্টেশন প্রেসক্রিপশন, ৬ মাস পরে প্রবেশন ইভ্যালুয়েশন শেষে কনফারমেশন-এই সবকিছুই হতে হবে প্রফেশনাল পথে।

আমাদের এখানে আমরা আমাদের সব পর্যায়ের কর্মী বাছাই করার সময় সবাইকেই বাই ডিফল্ট ৮টি স্তরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাই, ফলে সবার জন্য সমান সুযোগ ও নিয়ম বলবত হয়। আবার, আমরা মোটামুটি একটা কমপিটেন্সি ম্যাট্রিক্স ও বেঞ্চমার্ক ফলো করি। যদিও হ্যা, আমাদের এ্যসেসমেন্টের প্রক্রিয়াগুলো আরও ডায়নামিক, আরও কাস্টমাইজড এমনকি পারসোনালাইজড করে তোলার কাজ চলমান আছে। আপনাকেও ভাবতে হবে সেগুলো নিয়ে।

একই ফানেলে সবাইকে মাপলে আপনি একই রকম প্যাটার্নের মানুষ পাবেন। কখনো কখনো সঠিক মানুষটাকে হারাবেন। কারন, সব টিমের সব রকম কর্মী, বিশেষ করে জেন জেড, জেন আলফার চাকরি প্রত্যাশীদের, অথবা ক্রিয়েটিভ টিমের বা বিশেষায়িত টিমগুলোর কর্মীদের বাছাই প্রক্রিয়া কাস্টমাইজড না হলে চাকরি প্রত্যাশীদের উৎসাহ ও আগ্রহ হারাবেন, যা হেড হান্টিংয়ের সফলতাকে বাধাগ্রস্থ করবেই। একই ধান চালবার চালুনে যদি চালের গুড়োও চালেন, তাহলে চালের গুড়ো তো সব চালের সাথে গিয়ে পড়বে। চালের গুড়োর জন্য এক চালুন, চালের ক্ষুদ আলাদা করতে ভিন্ন চালুন, ধান চালবার অন্য চালুন বা চালুনি নিতে হবে। ম্যানপাওয়ার হায়ার করতেও তাই।

আপনার হেড হান্টিং মাস্ট বি ব্যাকড আপ বাই আ সুপার ফাইন পলিসি এ্যন্ড প্রসেস। অভিন্ন পলিসি ও প্রসেসে সিলেকশন হলেও টুলস ও টেকনিকসে কাস্টমাইজেশন আসবে। ভিন্ন ভিন্ন পোর্টফলিও, ভিন্ন এ্যসাইনমেন্ট, ভিন্ন পজিশনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফিলটার ও ফানেল ব্যবহার করুন। সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না। বাজারে গেলে দেখবেন, বড় পণ্য মাপবার বড় স্কেল থাকে। চালের বস্তা ওজনের স্কেলে কি গোল্ডের গহনা মাপা যায় কখনো? এই তুলনা হতেই বুঝুন।

’হেড হান্টিং’ শব্দযুগল শুনতে যেমনই হোক, কার্যক্ষেত্রে হেড হান্টিং যে জঙ্গলের বুনো শুয়োর শিকার নয়, বরং ব্যাপারটা অনেকটা মায়ামৃগ শিকারের মতো-সেটা চিন্তার জগতে প্রোথিত করে নেয়ার মধ্যেই হেড হান্টারের সাফল্যের এবং একটি সফল হেড হান্টিং ড্রাইভ সম্পন্ন করবার প্রাণ নিহীত।

হেড হান্টারকে হতে হবে স্মার্ট, কুইক, ডায়নামিক, শার্প, টেক ফ্রেন্ডলী। তাকে হতে হবে মা দূর্গার মতো দশভূজা। এক হাতে রেজুমে, এক হাতে অফার লেটার, আরেক হাতে ATS, অন্য হাতে ব্র্যান্ডিং। বাকি ৭ হাতে আরও সাতটা অস্ত্র। তার তুনীরে সব তীর থাকতে হবে। সব তীর চালনায় তাকে দক্ষ হতে হবে। তাকে একই সময়ে ব্যাক স্ট্রোক ও বাটারফ্লাই দিতে অভ্যস্ত হতে হবে।

একজন স্মার্ট হেড হান্টার হতে পারেন একটি প্রতিষ্ঠানের HR টিমের জন্য গেম চেঞ্জার। কারন, জানেনই তো, একটি সফল অনবোর্ডিং যেমন প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক ভ্যালু ক্রিয়েট করে, তেমনি ভুল হায়ারিং কী কী ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে, তার কিছু নমুনা সংযুক্ত ছবিতে দেখতে পাবেন। ভুল হায়ারিংয়ের পরিণতি কী হতে পারে তা পাবেন ছবিতে।

আর একটি ভুল সারাজীবনের কান্না। বিশেষত হায়ারিংটা যদি হয় টপ পজিশনের কারো। আর ভুল হেড অব এইচ.আর হায়ার করলে তো মাশাল্লহ।

হেড হান্টার এবং ট্যালেন্ট এ্যকুইজিটর-নামের শেষে এসব বড় বড় তকমা লাগাতে এই দেশে কোনো লাইসেন্স লাগে না ঠিকই, তবে তলানী ও প্রসেসের যদি ওজন বজায় না থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানে মায়ামৃগ নয়, শাখামৃগে ভরে যাবে।

বিশ্লেষক: HR.A.C Professional । Adviser । Headhunter । Writer । Counselor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!