
মোঃ কামাল হোসেন
“চাচা আপন পরান বাচাঁ” এমন বচনটি আমাদের অনেকেরই জানা আর আমরা বিপদের সময় সেইমতেই কাজ করি।আর তেমনটি করা স্বাভাবিক।
আমরা যারা গার্মেন্টস সেক্টরে চাকুরী করি ‘আগুন’ নামটি আমাদের কাছে একটি আতংক। আর আমাদের ভিতর একটি বিশ্বাস কাজ করে যে, কারখানাতে আগুন লাগলে কি এমন হবে, দুটি চোখ আছে দুটি কান আছে দুটি পা আছে দেখে শুনে দৌড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাবো। কিন্তু আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি,এমন পরিস্থিতিতে যাদের কে বিপদের মুখে ফেলে রেখে যাই, আর কিছুক্ষণ পর হয়তো পোড়া লাশের গন্ধ আসে আমাদের নাকে, অথচ যারা পুড়ে যায় তারাও তো আমাদের সহকর্মী ছিল এই কিছুক্ষন আগেও। যে কারখানাকে পুড়তে দেখছেন আপনার চোখের সামনে, সেখান থেকে তো এতোদিন আপনার রিজিকের ব্যবস্থাও হয়েছে। নিজে আগুনের হাত থেকে পালিয়ে যতটুকু স্বস্তি পেয়েছেন, তার থেকে অনেক বেশি গৌরববোধ করতেন এবং ভালোলাগা কাজ করতো যদি সহকর্মীদেরকে এবং কারখানা কে বাঁচাতে পারতেন। তাই কাপুরুষের মতো শুধুমাত্র নিজের জীবনকে নয় বীরের মতো আগুন কে মোকাবেলা করে প্রিয় কারখানা এবং প্রিয় সহকর্মীদের কে বাঁচানোই হোক আমাদের মূল লক্ষ্য। আর এই কাজটি তখন সম্ভব হবে, যখন আপনি আগুন নিভানোর কাজে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার জানবেন এবং অনুশীলন করবেন। আসুন আমরা আগুন লাগলে করণীয় ও নিভানোর কাজে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রের ব্যবহার বিধি জেনে নিই—–
১) আগুন লাগলে আতংকিত না হয়ে কোথায় আগুন লাগছে দেখার চেষ্টা করুন।
২) আগুন দেখতে পেলে ফায়ার এলার্ম খুজে বের করুন এবং তা বাজাতে সুইচে টিপ দিন।
৩) আগুন ছোট হলে আগুনের ধরণ অনুযায়ী আগুন নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার করে আগুন নিভানো যাবে।
৪) যদি ধোঁয়া হয় তাহলে গ্যাসমাস্ক পরে নিতে হবে তাহলে আপনি ৩০ মিনিট নিরাপদে আগুন নির্বাপণ করতে পারবেন।
৫) ফায়ার হুক দিয়ে আগুন লাগার স্থানের আশেপাশের সকল মালামাল টেনে সরাতে হবে। তাহলে আগুন বেশি ছড়াবে না।
৬) বিটার দিয়ে আপনি ইচ্ছা করলে যেখানে আগুন লাগছে সেখানে আস্তে আস্তে বাড়ি দিয়ে আগুন নিভাতে পারবেন।
৭) যদি কারো গায়ে আগুন লাগে তাহলে আগুন রোধক কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধরুন দেখবেন আগুন নিভে গিয়েছে।
৮) যদি কেও আটকা পড়ে কিংবা তালাবদ্ধ থাকে তাহলে দেড়ী না করে লক কাটার দিয়ে তালা কেটে ফেলুন অথবা জানালার গ্রিল কেটে তাদের কে উদ্ধার করুন।
৯) গরম কোন ধাতব বস্তু যদি ধরার প্রয়োজন হয় তাহলে তাপ রোধক হাতমোজা পরে নিতে ভূলবেন না এতে করে আপনার হাত পুড়বে না।
১০) যদি দেখেন উপর থেকে কিছু পড়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে মাথায় হেলমেট পরে নিবেন।
১১) যদি দেখেন কেউ আহত হয়েছে তাহলে দ্রুত তাকে স্ট্রেচারে করে দুইজন দুই দিকে ধরে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসবেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
১২) প্রয়োজনে আগুনের মোকাবিলা করার সময় চোখে চশমা পরে নিবেন তাহলে চেখে তাপ লাগবে না।
১৩) সিঁড়ি দিয়ে যদি বাহির হওয়া সম্ভব না হয় তাহলে ম্যানিলা রোপ দিয়ে বিকল্প পথে ঝুলে বাহির করে দিতে হবে অথবা অনেক ফ্যাক্টরীতে এখন বাহির দিকে একটি বিকল্প লোহার সিঁড়ি থাকে তা ব্যবহার করুন।
১৪) অন্ধকার থাকলে টর্চ লাইট ব্যবহার করুন।
“আগুনের হাত থেকে নিজে বাঁচুন এবং অন্যকেও বাঁচান” এই হোক স্লোগান। তবে মনে রাখবেন আগুন নির্বাপনের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।
লেখকঃ সহকারী ব্যবস্থাপক( মানবসম্পদ এবং প্রশাসন), মডেল গ্রুপ
Leave a Reply