
এম এ মান্নান পাভেল
(উল্লেখ্য লেখাটি লেখকের নিজস্ব অভিমত যা ব্যক্তিগতভাবে কাউকে বা কোন প্রতিষ্ঠানকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয় নি। পোশাক শিল্পের প্রতি তার ভালবাসা থেকেই তিনি এটি লিখেছেন , আরএমজি জার্নাল সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করে।)
পৃথিবীর শুরু হতে আজ অবধি মানুষ একসাথে বসবাস করছে পারষ্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু যখন একজনের প্রতি অন্যজনের আস্থা বা বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে, একই ছাদের নীচে আর নয়। আমার এ কথার সাথে অনেকেই হয়তো একমত হতে পারবেননা। তবুও বলছি নিজের ঘরে যে সঙ্গি বা সঙ্গিনী রয়েছে একবার তার উপর হতে যদি আস্থা বা বিশ্বাস হারিয়ে যায় তাহলে একই ছাদের নীচে বসবাস করবেন কি? হয়তো অনেকেই ভাবছেন কেন মিছে মিছে ঘরের মানুষকে নিয়ে টানাটানি করছি। গত কয়েকদিন পূর্বে “বাংলাদেশে বিদ্যমান পোষাক শিল্পে কর্মরত ৮৫% নারী শ্রমিক যৌন হয়রানির শিকার” মর্মে একটি প্রতিবেদন নিয়ে সারা বিশ্বে তুলকালাম চলছে। আর এ তুলকালামের সবচেয়ে বড় কারন হচ্ছে যারা প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন তারা শুধুমাত্র ০৮ টি ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের উপর পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন। যাই হোক আসল কথায় আসি, আমি যদি বলি সারা বিশ্বের শতভাগ নারী যৌন হয়রানির শিকার তাহলে কি ভুল হবে? শুধু শুধু পোষাক শিল্পে কর্মরত নারীদের অবমূল্যায়ন, অসম্মান করার কোন যুক্তিকতা আছে বলে মনে হয়না।
বর্তমান সময়ে এসেও বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের পরিবারের বেশীরভাগ সদস্যই অশিক্ষিত। তারা যৌন হয়রানির অর্থ বা যৌন হয়রানি কি এটা ভাল করে এখনো বুঝে বলে মনে হয়না। কিন্তু তারা এটা খুব ভাল করে বুঝে যে, তার মা, বোন স্ত্রী এবং মেয়ের একটা সম্মান আছে। যে সম্মান তার সারাজীবনের জন্য পথ চলার পাথেয়। এ সম্মান যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় বা কেউ যেন অসম্মান করতে না পারে এ ব্যাপারে তারা সদাই যথেষ্ট সজাগ। তারা যৌন হয়রানি না বুঝলেও চায়ের কাপের ঝড়ে যখন পাশের বাড়ির কেউ বলে “কি মিয়া তুমি অমুক গার্মেন্টসে কাজ করো জানো সেখানের বেবাগ মেয়ে মানুষের সাথে খারাপ কাজ হয়?” তখন সে আর এটা খুজতে যায়না যে, যৌন হয়রানি মানেই খারাপ কাজ নয়। সে বিশ্বাস করে ফেলে যৌন হয়রানি মানে মেয়েদের সাথে খারাপ কাজ করা তার সম্মান নষ্ট করা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তখন শুরু হয়ে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ, নিজের সাথে নিজের মনের যুদ্ধ, আর এ যুদ্ধের সবচেয়ে বড় কারন হচ্ছে একটি গুজব । যারা যৌন হয়রানির শিকার বলে তথ্যটি প্রদান করেছেন তাদের অবশ্যই বিস্তারিত তুলে ধরার প্রয়োজন ছিল। যে ব্যক্তিটি নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে গুজবে বিশ্বাস করে কোন কিছু না বুঝেও হুজুগে দৌঁড়াতে শুরু করে দেয় যে তার স্ত্রী, মা, বোন কিংবা মেয়ের সম্মান নষ্ট হয়ে গেছে, এর দায়ভার কে নিবে?
জানিনা প্রকাশিত প্রতিবেদনের সহিত কারো কোন স্বার্থ জড়িত আছে কিনা তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমার আপনার সকলের স্বার্থ জড়িত আছে। এ শিল্পে কর্মরত প্রতিটি নারী আমাদের কারো মা, কারো বোন, কারো স্ত্রী কিংবা কারো সন্তান, তাদের সম্মান আমাদের প্রত্যেকের সম্মান। তাদেরকে যদি শ্রদ্ধা করতে না পারি তাহলে নিজের পরিবারে যে নারীরা রয়েছে তাদেরকেও কিন্তু আমরা শ্রদ্ধা করতে বা সম্মান দিতে অবজ্ঞা করবো কিংবা দেবোনা। পোশাক শিল্প বর্তমান সময়ে আমাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি। এখন যদি কোন পরিবারের পুরুষ সদস্য মনে করেন যে, এ শিল্পে কাজ করা সব নারীই যৌন হয়রানি শিকার (অল্পশিক্ষিত লোকদের নিকট যৌন হয়রানির অর্থ পূর্বেই বলেছি) এদের পরে বিয়ে দিতে অসুবিধা হবে, সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিবে যে এদের আর কাজ করার দরকার নেই। তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে?শুধু পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের নিয়ে কেন এই বৈষম্যমূলক তথ্য প্রদান করা হলো? আর যারা বুঝেনা যৌন হয়রানি কি ধরনের বা কি কি হতে পারে তারা এই বিষয়টিকে কিভাবে বিচার করবে? সংসারে পরিবারে কিংবা সমাজে কি একটি অশান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবেনা? এতে করে ছাদের নীচে বসবাস করা মানুষগুলো কি দিন দিন অপরিচিত হয়ে উঠবেনা আর যদি তাই হয় তাহলে এ দায়ভাড় কার?
লেখকঃ ব্যবস্থাপক, এইচআর এন্ড কমপ্লায়েন্স, স্টারলেট এপারেলস লিমিটেড।
Leave a Reply