
মুহাম্মদ জসীম উদ্দীন
একটি রপ্তানীমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রত্যেক কারখানার স্ব স্ব বিভাগের কর্ম নির্দেশনা থাকাটা শুধু জরুরীই নয় আবশ্যকীয়ও বটে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হল অনেক ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় এবং বিভাগের কর্ম নির্দেশনা থাকলেও স্টোর ডিপার্টমেন্ট এর জন্য এই নির্দেশনা তেমনটা দেখা যায়না। কোন কোন অডিটে এটি উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে তা কেবল CAP এই সীমাবদ্ধ থেকে যায় বা কোন একটা কপি পেষ্ট মেইল দিয়ে পার পেয়ে যান। এই ধরনের নীতিমালা থাকা না থাকা সমান কথা। ফাইলে একটি কাগজের সংখ্যা বৃদ্ধিই শুধু সার কথা! এমনকি যেই স্টোরের জন্য নীতিমালা বানানো হল সেই স্টোরেই অনেকে জানেন না যে তাদের জন্য একটি কর্ম নির্দেশনা আছে যা তাদের ভুলত্রুটি থেকে সুরক্ষা দেবে।
তবে অল্প কিছু কোম্পানীতে আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালা আছে যা ধীরে ধীরে আমাদের দেশের আইনের মত অকার্যকর হয়ে পরে এবং পরবর্তীতে যেই লাউ সেই কদুই সার কথা। এখানে আমি একটি পোশাক কারখানার স্টোর অপারেশন রিলেটেড সংক্ষিপ্ত কর্ম নির্দেশনা উল্লেখ করলাম যা থেকে আপনি আপনার কারখানা অনুযায়ী নিজেই কর্মনির্দেশিকা বানাতে পারবেন এবং তা ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আপনার স্টোর টীমকে সহযোগিতা করতে পারেন। এতে কোম্পানী এবং কর্মরত সকলের কল্যাণ নিশ্চিত হবে। আসুন নীচের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় যেনে নিই কাঁচামাল গ্রহণ, সংরক্ষন, ইনভেন্টরি রিপোর্ট (প্রতিবেদন) প্রদাণ ও সাব-স্টোর/উৎপাদন বিভাগে বিতরণের কর্ম নির্দেশনা
১) কাঁচামাল গ্রহণঃ যে কোন সরবরাহকারী কর্তৃক সরবরাহকৃত কাঁচামাল গ্রহণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সরবরাহকৃত পন্যের চালানে উল্লেখিত পরিমাণ (সংখ্যা/ওজন) শতভাগ নিশ্চিত হয়ে অস্থায়ী কাঁচামাল রাখার নির্ধারিত স্থানে (Quarantine Area) রাখতে হবে। যা কোয়ালিটি বিভাগ কর্তৃক পণ্যের গুণাগুণ নিশ্চিত হবার পর বায়ার অনুযায়ী কাঁচামাল রাখার সুনির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং যেই “বিন” এ মালামাল রাখা হয়েছে তার রেফারেন্স নাম্বার পণ্যের চালানে উল্লেখ করতে হবে।
উল্লেখ্য থাকে যে, সাইজ ও কালার সম্পর্কিত কাঁচামালের ক্ষেত্রে সরবরাহকৃত পণ্যের সংখ্যা শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোন মালামাল কোয়ালিটি চেকের জন্য দেয়া যাবে না। অতঃপর দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্চেন্ডাইজারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সাপেক্ষে কোয়ালিটি বিভাগকে পন্যের গুনাগুণ চেক করার জন্য দেয়া হবে।
২) কাঁচামাল গুণগত মান নিশ্চিতকরণঃ সরবরাহকারী কর্তৃক প্রদত্ত মালামাল উল্লিখিত চালানের সাথে সংখ্যাগতভাবে মিলানোর পর Quarantine Area থেকে কোম্পানীর কোয়ালিটি নীতিমালা অনুযায়ী চেক করার পর সুনির্দিষ্ট মার্চেন্ডাইজার/বায়িং অফিস থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে এবং অনুমোদনের রেকর্ড/সোয়াস কার্ড নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
৩) ইনভেন্টরী রিপোর্টঃ নির্দিষ্ট স্টাইলের বিপরীতে প্রাপ্ত কাঁচামাল গ্রহণের রিপোর্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টোর অফিসার অনধিক তিন কর্ম দিবসের মধ্যে মার্চেন্ডাইজার কর্তৃক প্রদত্ত BOM (Bill of Materials) ফাইল পূরণ করে মার্চেন্ডাইজারের নিকট পাঠাতে হবে এবং সর্বশেষ কপি ফাইলে সংরক্ষণ করতে হবে।
৪) ট্রিমস কার্ড প্রস্তুতঃ নির্দিষ্ট ফাইল/অর্ডারের বিপরীতে গ্রহণকৃত মালামাল কোম্পানীর নির্ধারিত ট্রিমস কার্ডে প্রতিস্থাপন করে কোয়ালিটি/মার্চেন্ডাইজার কর্তৃক অনুমোদন করে নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, এই ক্ষেত্রে পরিকল্পনা বিভাগের ই-মেইলের অপেক্ষা না করে যখনি মালামাল গ্রহণ করা হবে তখনি তা নির্দিষ্ট ট্রিমস কার্ডে স্থাপন করে রাখতে হবে।
৫) কাঁচামাল সরবরাহঃ কোম্পানীর পরিকল্পনা নীতি অনুযায়ী কোন স্টাইলের বিপরীতে শতকরা যত ভাগ অতিরিক্ত কাঁচামাল সরবরাহ করবে তার বেশী কাঁচামাল মেইন স্টোর থেকে সাব-স্টোরে দেয়া যাবেনা। অতিরিক্ত কাঁচামাল মেইন স্টোরে সংরক্ষণ করতে হবে। কোন স্টাইল বা অর্ডার সুইং শুরু হবার কমপক্ষে দুই কর্মদিবস পূর্বে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সাব-স্টোরে সরবরাহ করতে হবে।
৬) অতিরিক্ত কাঁচামাল সরবরাহঃ কোন স্টাইল বা অর্ডারের বিপরীতে কোম্পানীর নীতিমালার অতিরিক্ত মালামাল সরবরাহের প্রয়োজন হলে সুনির্দিষ্ট মার্চন্ডাইজার কর্তৃক তা অনুমোদিত হতে হবে এবং যে কারণে অতিরিক্ত কাঁচামাল প্রয়োজন তা চাহিদাপত্র বা মালামাল সরবরাহ রশিদে উল্লেখ থাকতে হবে। উল্লেখ্য যে অতিরিক্ত মালামাল স্টোরে থাকা সাপেক্ষে সরবরাহ করা হবে। অন্যথায় অতিরিক্ত মালামাল প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মার্চেন্ডাইজারের মাধ্যমে তা ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) অবশিষ্ট কাঁচামাল ব্যবস্থাপনাঃ কোন সুনির্দিষ্ট স্টাইল/অর্ডার শিপমেন্ট এর এক সপ্তাহ পর উক্ত স্টাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল যদি অবশিষ্ট থাকে তা অনতিবিলম্বে মেইন স্টোরে ফেরত দিতে হবে। মেইন স্টোর উল্লিখিত অতিরিক্ত কাঁচামাল থেকে যে সব আইটেম পরবর্তী স্টাইল/অর্ডারে ব্যবহার করা যাবে তেমন কাঁচামাল সমূহ আলাদা ভাবে সংরক্ষণ করবে এবং তা মার্চেন্ডাইজারকে নোটিশ করবে। এ ছাড়া অন্য যে সব কাঁচামাল পূণরায় ব্যবহার করা যাবেনা তা কোম্পানীর নীতিমালা অনুযায়ী স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৮) সাব-স্টোর থেকে সরবরাহঃ
ক) সাব-স্টোর থেকে ইনপুট চালানের সাথে সমন্বয় করে এক্সেসরিজ সরবরাহ করতে হবে।
খ) সুতা সরবরাহের ক্ষেত্রে অনুমোদিত কনজাম্পশন অনুযায়ী সরবরাহ করতে হবে এবং অবশ্যই সুতার খালি কোন জমা নিতে হবে।
গ) ফিনিশিং এক্সেসরিজ প্রতিদিনের টার্গেট অনুযায়ী সরবরাহ করতে হবে। কিছুতেই এর অন্যথা করা যাবেনা।
৯) উপরোল্লিখিত ধাপ সমূহ সমাপ্তের পর অর্ডার/স্টাইল অনুযায়ী রিকন্সাইলিয়েশন রিপোর্ট সম্পন্ন করে তা কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে এবং এক কপি ফাইলে সংরক্ষণ করতে হবে।
উল্লিখিত নীতিমালাসমূহ স্টোর বিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলকে পড়ে, বুঝে তার পর পরিপূর্নভাবে মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। আমি মনে করি স্টোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কর্তৃক এই প্রক্রিয়ার কোন ব্যত্যয় এর ফলে কোম্পানী কোন রকমের আর্থিক অথবা সুনাম ক্ষুন্নের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার পুরো দায়ভার উক্ত অফিসারের উপরই বর্তাবে এবং তার আইনগত জটিলতায় পরার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।
লেখকঃ ডিজিএম-ষ্টোর, টেক্সইউরোপ (বিডি) লিঃ
Leave a Reply