
জুয়েল বৈদ্য
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে পরিলক্ষিত হয় যে, একজন যুবক ঠিক যখন তার শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে তখনই সে বিভিন্ন প্রকার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, বিশেষ করে চাকুরীর ক্ষেত্রে। যদি কারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকে সে হয়ত বড় মাপের কারও সুপারিশের ভিত্তিতে একটি চাকুরী পায় যেটা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। চাকুরী খোঁজা বা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাকি সকলে কিন্তু এধরণের সুযোগসুবিধা পায়না! যারা ইতিমধ্যেই তার পেশায় একটি পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন যারা কিনা স্বেচ্ছায় চাকুরী প্রার্থীদের চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা গেছে যে কিছু প্রফেশনাল নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সহযোগিতা বা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও কিছু সংস্থাকেও (হেড হান্টার) চাকুরী প্রার্থীদের সহযোগিতা করতে দেখা যায় বিশেষ করে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য। যদিও বা সকলেই কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করছেন কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের নিজের সিভি, চাকুরীর দরখাস্ত কিংবা ফরোয়ার্ডিং লেটার লেখার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
উপরে উল্লেখিত বিষয়টি বিবেচনায় এনে বলা যায় যে, আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ তাদের প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি তাদেরকে শিক্ষা পরবর্তী কর্মক্ষেত্র কিংবা চাকুরীর বিষয়ে সহায়ক কিছু পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা। আমাদের মনে রাখতে হবে যে শুধু সার্টিফিকেটই যথেষ্ট নয়! অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ক্যারিয়ার সার্ভিস নামের একটি বিভাগ থাকা সত্ত্বেও তারা আসলে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকুরীর বিষয়ে খোঁজখবর তেমনভাবে রাখছেন না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন বিভিন্ন কোম্পানি থেকে তাদের কাছে সিভি চায় তার শুধুমাত্র যারা টপ গ্রেডের রেজাল্ট করেছে শুধু তাদের সিভিই পাঠিয়ে থাকেন যা একদিক থেকে পক্ষপাতিত্বের মধ্যেই পরে। এক্ষেত্রে যারা রেজাল্টের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম সফলতা পান তারা নিগৃহীত হন।
সিভির ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে চাকুরী প্রার্থীরা তাদের রেফারেন্স হিসেবে তাদের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/ বিভাগীয় প্রধান কিংবা ফ্যাকাল্টিদের নাম ব্যবহার করেন যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের চাকুরী পাবার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়না। কারণ তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিয়োগদাতারা যখন ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে জানতে চান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা গদে বাঁধা উত্তর দিয়ে থাকেন যা নিয়োগদাতাদের দ্বিধান্বিত করে।
এখন যদি যোগ্যতা সংক্রান্ত বিষয়ে আসি একজন ফ্রেসার এর ক্ষেত্রে ইংরেজীতে বেসিক কিছু জ্ঞান থাকা জরুরী। আমি এটি বলছিনা যে তাদের অনেক কিছু জানতে হবে কিন্তু অন্ততঃ নিজের সিভি লেখা, দরখাস্ত লেখা নিয়োগদাতার সামনে যতটুকু নিজেকে উপস্থাপনের প্রয়োজন ঠিক ততটুকু থাকলেই যথেষ্ট। আমাদের মনে রাখতে হবে ইংরেজী আমাদের মাতৃভাষা না এবং বেশীরভাগ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু আমরা ইংরেজী বিষয়ে পারদর্শীতার কোন অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ পাইনা। কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদিও এ বিষয়ে অনেক তৎপর কিন্তু সেজন্য গুনতে হয় বড় পরিমান অর্থ। ইংরেজির পাশাপাশি কম্পিউটার এর উপরও কিছুটা দক্ষতা থাকা জরুরী।
বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অনেক বিদেশী নাগরিক যেমন ভারতীয়, শ্রীলংকান এবং পাকিস্তানী অনেকে অনেক ভাল বেতনের চাকুরী করছেন যা বাংলাদেশী প্রফেশনালদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশী, এর মূল কারণ ইংরেজী এবং টেকনিক্যাল বিষয়ে তাদের দক্ষতা রয়েছে। টেকনিক্যাল বিষয়ে যে আমাদের দক্ষতা নেই তা বলছিনা কিন্তু তারা তাদের দক্ষতাটাকেও আমাদের চেয়ে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে। এর এইভাবেই তারা প্রতিমাসে কমপক্ষে ২৫০০ আমেরিকান ডলার বেতন পায় যার সাথে রয়েছে বাসস্থান, খাবার, বছরে ১ মাস ছুটি, বাড়ী যাওয়ার জন্য এয়ারবাস ফেয়ার ইত্যাদি বিভিন্ন সুবিধা। আর বাংলাদেশীদের কথা চিন্তা করলে তাদের বেতন টা আসে টাকাতেই এবং তা সেই বেদেশীদের চেয়ে অনেক কম। অনেক ফ্রেস গ্র্যাজুয়েট/ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী রয়েছে যারা বাধ্য হয়ে ৮০০০ টাকা বেতনের চাকুরী শুরু করে। এছাড়া তার আর কোন উপায় থাকেনা কারণ দেশে চাকুরীর সংকট। আর যদি কেউ বিজ্ঞান বা প্রকৌশল ব্যাকগ্রাউন্ড এর হয় সেক্ষেত্রে হয়তো ইন্টারভিউ এ অনেক কথাবার্তার পর মাসিক ১০০০০ থেকে ১২০০০ টাকা পায়। এখন যদি চিন্তা করি যে ছেলেটি ৮/১০ লক্ষ টাকা খরচ করে পড়াশুনা করলো তার জন্য এতো কম বেতন কি সুখকর কিছু? বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে অনেকে ৫/৬ লক্ষ টাকা খরচ করে ভাল একটি সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী পাচ্ছে কিন্তু যা সবার দ্বারা সম্ভব নয়। প্রবেশকালের বেতনের ক্ষেত্রে আমাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা উচিৎ, আসলেই এটি উচিৎ কিনা? আমার কেন জানি মনে হয় ৮০০০/১০০০০ টাকা বেতন দিয়ে আমরা তার সারাজীবনের পড়াশুনা ও ডিগ্রি গুলোকে অবজ্ঞা করছি।
দেশের নেতৃস্থানীয় মানুষদের এ বিষয়ে চিন্তা করাটা জরুরী যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা কর্মের জন্য উপযোগী শিক্ষা পায় তথা সম্মানজনক বেতনে চাকুরী করতে পারে।
Leave a Reply